লুটেরাদের স্বার্থে সুন্দরবন ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০১৫: রামপাল,ওরিয়ন বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন বিধ্বংসী সকল প্রকল্প বাতিল এবং প্রাণবৈচিত্র-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ আয়োজিত ‘সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’র উদ্বোধনী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প স্থান ও পদ্ধতি আছে। কিন্তু সুন্দরবনের বিকল্প নেই। আমরা বিদ্যুৎ চাই, তবে সুন্দরবন ধ্বংস করে নয়।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, লেখক-প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা শরীফ জামিল, বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশটি পরিচালনা করেন সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সুন্দরবন বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত। সুন্দরবনের সাথে আমাদের অস্তিত্ব জড়িত। লুটেরাদের স্বার্থের জন্য প্রাণবৈচিত্র-প্রকৃতি-পরিবেশসহ সুন্দরবন ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রামপাল, ওরিয়ন প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল না করলে, দেশবাসী সরকারকে ‘পরিবেশ ধ্বংসকারী সরকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতেই সকল অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।

খালেকুজ্জামান বলেন, সুুুন্দরবন শত শত বছর ধরে গড়ে উঠেছে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি শ্বাসমূলীয় জলাবন। লোনা পরিবেশের মধ্যে জন্ম নেওয়া ও বেঁচে থাকা বিশ্বের এক বিরল বন। এমনিতে নানাভাবে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এর উপর সুন্দরবনের অতিনিকটে ১৩২০ মেগাওয়াট এর দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আরো বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হলে সুন্দরবন রক্ষা পাবে না।

সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যদি পরিবেশ ধ্বংস হয়, অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, তাহলে সেই বিদ্যুৎ দিয়ে কী হবে? দেশবাসী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে সুন্দরবন বিধ্বংসী প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে। আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে। রামপাল, ওরিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, ওই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়বে। মুনাফাখোর, দালালদের স্বার্থের প্রকল্প কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ মেনে নিতে পারে না।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ভারতের সাথে যৌথ উদ্যোগে যে বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হচ্ছে, ভারতের আইনে ঐ দেশে এ ধরনের কোনো প্রকল্প কার যেত না। ইতোমধ্যে ভারতে এ ধরনের ৩টি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। অথচ দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থে বাংলাদেশে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সমাবেশ শেষে ‘সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’ যাত্রা করে। সন্ধ্যায় সাভার বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।এদিকে, ‘সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’ ১৪ অক্টোবর সকাল ৯টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে যাত্রা শুরু করবে। এরপর সকাল ১১টায় মানিকগঞ্জে সমাবেশ, বিকেল ৩টায় গোয়ালন্দ মোড়ে সমাবেশ এবং বিকেল ৪টায় ফরিদপুরে জনসভায় মিলিত হবে।