ফ্রান্সে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ও ভাস্কর্য উদ্বোধন

দৈনিকবার্তা-প্যারিস,২২ ডিসেম্বর: আসছে বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য ২১তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের ১৯০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিগ ইভেন্টে অংশ নিতে ফ্রান্স সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একইসাথে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বিশেষ স্কয়ার ও ভাস্কর্য। রাজধানী প্যারিস থেকে ৩শ’ কিলোমিটার দূরবর্তী পর্যটন শহর ‘পারে লূ মুনিয়াল’ প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের প্রতি জাঁকজমকভাবে সম্মান দেখাতে। প্যারিস থেকে ‘পারে লূ মুনিয়াল’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে একযোগে কাজ করছে ফরাসী স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ফরাসী সরকারের ব্যবস্থাপনায় বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্যারিস থেকে ‘পারে লূ মুনিয়াল’ শহরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও প্রশাসনে আলোচনা হয়েছে।

ফ্রান্সে বঙ্গবন্ধুর নামে স্কয়ার ও ভাস্কর্য স্থাপনের সফল রূপকার হচ্ছেন স্বনামধন্য কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কাজী এনায়েত উল্লাহ, যিনি দেশটিতে বসবাস করছেন ৩৬ বছর ধরে। ‘পারে লূ মুনিয়াল’ পৌর প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, কাজী এনায়েতের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্কয়ারের জন্য ইতিমধ্যে শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি সুপরিসর চত্বর নির্ধারণ করেছে প্রশাসন এবং একই স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ প্রধানমন্ত্রীর সফরের বেশ আগেই সম্পন্ন করতে তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। কাজী এনায়েতও এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ‘পারে লূ মুনিয়াল’ সফরকে ঘিরে প্রশাসনের তোড়জোড়ের বিষয়টি। ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কাজী এনায়েত উল্লাহ জানান, ভাস্কর্যের মূল প্লাটফর্মটি তৈরী হচ্ছে ‘পারে লূ মুনিয়াল’ পৌর প্রশাসনের অর্থায়নে। অন্যদিকে এর ওপর স্থাপনের জন্য দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটি প্রদান করা হবে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে। কাজী এনায়েতের অক্লান্ত পরিশ্রমে আলোর মুখ দেখতে চলা ঐতিহাসিক এই প্রকল্পটি সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে ইতিমধ্যে সফল হয়েছেন প্যারিসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম। একাধিকবার তিনি ‘পারে লূ মুনিয়াল’ সফর করেছেন এবং ফরাসী প্রশাসনের সাথে জোরেশোরে কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকার সাথে সমন্বয়ের ভিত্তিতে।

বাংলাদেশের বাইরে বঙ্গবন্ধুর নামে একই স্থানে স্কয়ার ও ভাস্কর্য এটিই প্রথম। জাতির জনকের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ ও ভালোবাসা থেকেই কাজী এনায়েত উল্লাহ ফরাসী প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে গত ৪ বছর জোর লবিং করে প্রকল্পটিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসেন। ১৯৭৮ সাল থেকে প্যারিসে বসবাস করছেন ইউরোপের ‘বিজনেস ম্যাগনেট’ এই মেধাবী বাংলাদেশি। ঢাকার বনানীর ঐতিহ্যবাহী ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’র চেয়ারম্যান পরিবারের কৃতি সন্তান কাজী এনায়েত  ফ্রান্স সহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রিয়েল এস্টেট, রেস্টুরেন্ট ও এয়ারলাইন্স ব্যবসায় আকাশচুম্বি সাফল্যের অধিকারি। কাজী এনায়েত উল্লাহ উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজের ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ‘জিএসএ’ হিসেবে কাজ করে আসছেন কৃতিত্বের সাথে। প্যারিস-ঢাকা ভিত্তিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিজনেস কনসালটিং (বিবিসি)’র ডিরেক্টর জেনারেল তিনি। ফ্রান্সের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশী পন্যের নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানে এবং বাংলাদেশের রফতানীকারকদের বহুমুখী কল্যানে ইতিমধ্যে সাফল্য দেখিয়েছে বিবিসি। অন্যদিকে ফ্রান্স-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যিক সম্পর্কের চলমান উত্তরণে সহায়ক শক্তি হিসেবে ফরাসী প্রশাসনের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বার।

আসছে বছরের মে মাসের প্রথম উইকেন্ডে ‘পারে লূ মুনিয়াল’ শহরে ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে জমকালো ‘বাংলাদেশ ডে’। কাজী এনায়েত একাধারে দায়িত্ব পালন করছেন ইউরোপের ৩০টি দেশের বাংলাদেশিদের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র সেক্রেটারি জেনারেলের। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কাভার করা প্রখ্যাত ফরাসী সাংবাদিক ফিলিপ আলফোনসির ঐতিহাসিক ভিডিও ফুটেজ নির্ভর সাড়াজাগানো তথ্যচিত্র ‘একটি পতাকার জন্ম’ সম্প্রতি নির্মিত হয় কাজী এনায়েত উল্লাহর সার্থক প্রযোজনায়। কয়েক বছর আগে আগে ফ্রান্স-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লাল টিপ’-এরও সফল প্রযোজক ছিলেন তিনি। ৩ যুগের বর্ণাঢ্য প্রবাস জীবনে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সাথে কখনো সম্পৃক্ত না থাকলেও ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ থিম নিয়ে কাজী এনায়েত বিশ্বব্যাপী মেলে ধরেছেন প্রিয় মাতৃভূমিকে। ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নেও রয়েছে তাঁর মজবুত অবস্থান। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের উর্ধ্বে থেকে দেশপ্রেমকেই চলার পথের পাথেয় করে নেয়া কাজী এনায়েত উল্লাহর মেধাকে কাজে লাগিয়ে আরো এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ, এমনটাই মনে করেন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিরা।