পবিত্র রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে উৎপাদক বা আমদানিকারকদের আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস নেই পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। তারা সরকারের কাছে রমজান উপলক্ষে পণ্যমূল্য নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছেন।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের এ দাবি মেনে নিয়ে রমজানের আগেই উৎপাদক, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।রমজান মাস আসার আগেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে আকাশ ছুঁয়েছে ছোলার মূল্য। গত রমজানের ছোলার দামের প্রায় দ্বিগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা ছোলা।গত দুই সপ্তাহ আগেও এ ছোলা বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকায়, কিন্তু ছোলা এখন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোলার পাশাপাশি বেড়েছে মুরগি, চিনি, ডিম ও বেসনের দামও। তবে কমেছে বাড়তির মধ্যে থাকা রসুনের দাম, কিছুটা কমে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এখন।কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা, বার্মিজ ছোলা ৮৫ টাকা, আর বুট বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে।গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বাড়তে থাকা চীনা রসুন দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, পাঁচ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ২৫ টাকা।
চার টাকা বেড়ে হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা হালিতে, মুরগির ডিম তিন টাকা বেড়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল ১৩৮ টাকা, বিদেশি ডাল ১০০ টাকা আর বাজারে তিন প্রকার বেসন বিক্রি হচ্ছে ৬০, ৮০ ও ১০০ টাকা।বাজারভেদে এসব ভোগ্যপণ্যের দরেও রয়েছে যথেষ্ট হের ফের। নিউমার্কেট ও পলাশী কাঁচা বাজারে বেশির ভাগ জিনিসপত্রের দামই কারওয়ান বাজারের চেয়ে বেশি।নিউমার্কেট বাজারে প্রতিকেজি ছোলা কারওয়ান বাজারের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডালের দাম দুই টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা, চীনা রসুন ২২৫ টাকা।এদিকে, পলাশী বাজারেও প্রায় প্রত্যেকটা পণ্যের দামই কারওয়ান বাজারের তুলনায় আট থেকে দশ টাকা বেশি। নিউমার্কেটের তুলনায়ও আরও পাঁচ-ছয় টাকা বেশি। পলাশীতে ছোলা ১০০ টাকা, বিদেশি মসুর ডাল ১০৫ টাকা, বিদেশি ১৪৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকা, দেশি ৫০ টাকা।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী গোলাম মাওলা বলেন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য সব সময় দায়ী করা হয়। আমরা এ বিষয়ে বলতে চাই, এ দায় আমাদের একার নয়। এ দায় আমদানিকারক ও উৎপাদকদের। তারা অযথাই আমাদের ওপর দায় চাপান। আমরা এ অবস্থা থেকে অব্যহতি চাই। এ কারণে আমরা সরকারের কাছে পণ্যমূল্যের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলাম।এর ফলে জনগণও জানতে পারবে, আমদানিকারক উৎপাদকদের কাছ থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কেমন মূল্যে পণ্য কেনেন। ভোক্তারা তা কেমন মূল্যে কিনতে পারবেন।
হাজী গোলাম মাওলা বলেন, গত এক মাসে চিনির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গত ১৭ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে জানলাম, দেশে উদ্বৃত্ত চিনি রয়েছে। দেশে চিনিকলগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে চিনি রয়েছে। মেঘনা গ্র“পের কাছে এক লাখ ৭৫ হাজার টন চিনি মজুদ আছে। সিটি গ্র“পের কাছে এক লাখ ৪৫ হাজার টন চিনি আছে। তারপরও কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। মেঘনা গ্রুপ বলছে, তাদের মিলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় দাম বাড়তি। দাম বাড়ানোর এ যুক্তি কতোটা যৌক্তিক তা আপনারাই চিন্তা করেন!তিনি আরও বলেন, একটা মিল যদি এক সপ্তাহ বন্ধ থাকে এবং এক সপ্তাহ আগে যদি বিশ্ববাজারে দাম বাড়ে, সে দোহাই দেখিয়ে দেশে আগে থেকে আমদানি করা লাখ লাখ টন পণ্যের কেজিপ্রতি ১০ টাকা দাম বাড়ানো কতোটা যৌক্তিক এটাও ভাবা দরকার’।একই অভিযোগ বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী শফিক আহমেদের। তিনি বলেন, গত এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে বস্তায় (৫০ কেজি) ১ হাজার ২শ’ টাকা। ১ হাজার ৮শ’ টাকার ছোলার দাম এখন ৩ হাজার টাকা। অথচ হিসাব বলছে, দেশে বার্ষিক চাহিদার চেয়েও ২ লাখ টন ছোলা বেশি মজুদ আছে। তাহলে আসলে হচ্ছেটা কি! আমরা এ অরাজকতা থেকে মুক্তি চাই। আমরা কোনো দায় নিতে চাই না। আমরা চাই, সরকার এলসি ডেট অনুযায়ী বৈশ্বিক বাজার দর নির্ধারণ করে দিক। সে অনুযায়ী ঠিক হোক আমদানিকারকদের কাছ থেকে আমরা কি দরে কিনবো, পাইকারি দর কি হবে এবং ভোক্তারা কি দামে তা কিনতে পারবেন।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকার পুরো বিষয়টি নজরদারিতে রাখছে। কারা কি দামে, কখন, কোন পণ্য আমদানি করছে, কার কাছে থেকে কোথায় কি পরিমাণ পণ্য যাচ্ছে এবং কি পরিমাণে পণ্য দেশে মজুদ আছে, ব্যবসায়ীরা কি দামে এটা বিক্রি করছেন তাও নজরদারি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হাল নাগাদ বিশ্ব বাজারও মনিটরিং করা হচ্ছে।