gonojagoron-doinikbarta

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের জাগরণ যাত্রা শীর্ষক বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।মঞ্চের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালন করা হচ্ছে গণজাগরণ দিবস।শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে র‌্যালি শুরু হয়।র‌্যালিটি রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে থেকে ঘুরে টিএসসি-চারুকলা হয়ে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়।জামায়াত নিষিদ্ধ করো, আমার মাটি আমার মা, পাকিস্তান হবে না’সহ বিভিন্ন লেখা সংবলিত ফ্যাস্টুন, প্ল্যাকার্ড এবং যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাঙ্গচিত্র নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা র‌্যালিতে অংশ নেন।এ সময় বহন করা হয় বিশাল আকৃতির জাতীয় পতাকা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করা, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নসহ বিভিন্ন দাবির কথাও র‌্যালি থেকে জানানো হয়।গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এসব কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

জন্মের পর চার বছরে পা রাখছে গণজাগরণ মঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গড়ে ওঠে এ সংগঠন। একাত্তরের কসাই খ্যাত জামায়াতের এ নেতাকে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলে ফুঁসে ওঠে নতুন প্রজন্মের লাখো তরুণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকনির্ভর যোগাযোগে এদিন বিকেলে হঠাৎ করে দেশের তরুণ এ তুর্কিরা জড়ো হয় শাহবাগে। ‘ফাঁসি’ চায় কাদের মোল্লার। অনুজদের এ দাবির প্রতি দিনে দিনে সমর্থন বাড়ে। যুক্ত হয় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।প্রতিষ্ঠার এ বার্ষিকীতে শাহবাগে আয়োজন করা হয় দু’দিনের অনুষ্ঠানমালা। ‘নির্ভয় চিত্তে মুক্তির সংগ্রামে অবিরাম স্লোগনকে সামনে রেখে শুক্রবার পালিত হয় মঞ্চের নেতাকর্মীদের মিলনমেলা।

২০১৩ সালের ৫ ফব্র“য়ারি একাত্তরের সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিকামী মানুষের শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছিল সেই গণজাগরণ মঞ্চের তিন বছরের ঘটনাবহুল পথ-পরিক্রমায় তা ঋদ্ধ হয়েছে অনেক ত্যাগ আত্মদান আর শপথের দৃঢ়তায়।যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয়করণ, মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের অপচ্ছায়া থেকে ত্রিশ লক্ষ শহিদের শোণিতে সিক্ত বাংলাদেশকে রক্ষা, ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সমানাধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি দূর করে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি মানবিক নানা দাবিতে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার সোনার বাংলা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেই শুরুর দিন থেকে গণজাগরণ মঞ্চের সংগ্রাম অব্যাহত আছে।

মঞ্চের তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৪টায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা রং-তুলিতে স্বপ্নের বাংলাদেশ’, বিকাল ৪টায় জাগরণ যাত্রা, বিকাল ৫টায় স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান ‘স্মৃতিতে জাগরণ’, সন্ধ্যা ৭টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আগামীকাল ৬ ফেব্র“য়ারি বিকাল ৩টায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ; কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক আলোচনা সভা, সন্ধ্যা ৬টায় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও শাহবাগের গান।যুদ্ধাপরাধীমুক্ত, জামাত-শিবিরমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সবাইকে সপরিবারে, সবান্ধবে গণজাগরণের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, এই আন্দোলনে যে তাজা প্রাণগুলো ঝরে গেছে, তাদের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা মিলব গণজাগরণের মিলনমেলায়।