দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ জানুয়ারি ২০১৬: ঢাকায় নবনিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। এছাড়া আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিস্থিতি হাইকমিশন পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান তিনি।বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন যুক্তরাজ্যের নতুন এই হাইকমিশনার।বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হিসেবে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন ব্লেইক। বুধবার তিনি ঢাকায় ব্রিটিশ ক্লাবে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।এলিসন ব্লেক বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় যুক্তরাজ্য পাশে থাকবে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নের সবক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে এ দেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় তার দেশ।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেইক বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে দুই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে তাদের যে উদ্বেগ ছিল, সেটি গোপন করার কিছু নেই। কারণ, অধিকাংশ জনগণ ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ডব্রটিশ হাইকমিশনার আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এবং আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে যুক্তরাজ্য অবদান রাখতে পারে। আইনের শাসনের মাধ্যমে সুশীল সমাজের বিকাশ ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল সমাজ বিনির্মানের সবচেয়ে উত্তমপন্থা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।।অ্যালিসন ব্লেক বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু ও বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক দাতা হিসেবে যুক্তরাজ্য এ দেশের ভবিষ্যৎ ও দুই দেশের সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ দেশের মানুষ ব্রিটিশ সমাজে অপরিমেয় অবদান রেখেছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশে এ দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে যুক্তরাজ্য।বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি কীভাবে দেখেন—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্লেইক বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে দুই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে তাদের যে উদ্বেগ ছিল, সেটি গোপন করার কিছু নেই। কারণ, অধিকাংশ জনগণ ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তারা মন্তব্য করে না। তার পরও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন যেমন অতীতের তুলনায় শান্তিপূর্ণ ছিল, তেমনি হস্ত ক্ষেপও কম ছিল। বিরোধী দলও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব পর্যায়ের নির্বাচনে সব পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সহায়তা থাকবে বলে উল্লেখ করেন ব্লেইক। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে সবার অংশগ্রহণ থাকা উচিত। কেননা, এটি একটি দেশের জন্য স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ আছে। এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা রয়েছে। তবে কারও বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা কারও কাজের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তাঁরা তাঁদের সহযোগিতা করেন না। ব্লেইক বলেন, গণমাধ্যমে এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তার প্রতিটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।সম্প্রতি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করতে বারবার তাগিদও দিয়েছে দেশটি।এ ক্ষেত্রে সবশেষ অগ্রগতি কী এবং পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট চলাচল বিঘ্নিত হবে কি না—জানতে চাইলে ব্লেইক বলেন, শারম আল শেখ থেকে রাশিয়া যাওয়ার পথে একটি রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালিত হয়—এমন বেশ কয়েকটি দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে তাঁরা তাগিদ দিচ্ছেন।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁদের সহযোগিতা যথেষ্ট ভালো। এতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে।যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করা হবে তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো, উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া, শিক্ষা খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মেলবন্ধনের বিষয় গুরুত্ব পাবে। সূচনা বক্তৃতায় ব্লেইক বলেন, কমনওয়েলথের সদস্য দেশ হিসেবে দুই দেশের মানবাধিকার সুরক্ষা ও সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সংসদীয় গণতন্ত্র এবং একটি সহনশীল ও বহুমত-ব্যবস্থার প্রতি অঙ্গীকার রয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, আইনের শাসনের কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত ও বিকশিত নাগরিক সমাজ নিয়ে গড়ে ওঠা গণতন্ত্র হচ্ছে সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল সমাজ বিনির্মাণের সবচেয়ে ভালো পথ। মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে এবং উন্নয়নপ্রক্রিয়া থেকে একজনকেও বাইরে রাখা হবে না এমন প্রয়াসে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাজ্য প্রস্তুত।