অভিজিতের প্রকাশকের কার্যালয়ে তিনজনকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ অক্টোবর ২০১৫: জঙ্গিদের হামলায় নিহত মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বর’র স্বত্ত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন।বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে শনিবার হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।তাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে ও গুলিতে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা ঢাকামেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।আহত অন্য দুজন হলেন তারেক রহিম ও রণদীপম বসু। কতিপয় দুর্বৃত্ত বেলা আড়াইটার দিকে লালমাটিয়ার সি ব্লকে পাঁচতলা একটি ভবনের চারতলায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এ হামলা চালায়।এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে কার্যালয়ের বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। পরে খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।এদিকে, অস্ত্রোপচারের পর ঢাকা মেডিকেলের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের সার্জন কে এম রিয়াজ বিকাল ৫টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, টুটুল ও তারেকের অবস্থা ক্রিটিকাল। রণদীপম আশঙ্কামুক্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র প্রাথমিকভাবে জানায়,তারেক রহিমের বুকের বাম দিকে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া তাঁর মাথা ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়েছে। আহমেদুরের মাথা ও হাতে এবং রণদীপম বসুর হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ খবর পেয়ে ওই কার্যালয়ের তালা ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।ঢাকা মেডিকেল থেকে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন বলেন, আহত অবস্থায় আমি দুজনকে নিয়ে এসেছি। তাঁদের হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে।

এদিকে বিকেলে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে যান সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি। সেখান থেকে নেমে তিনি দাবি করেন, আড়াইটার পরপর প্রকাশক টুটুলের নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। রাসেল নামে এক যুবক নিজেকে শুদ্ধস্বরের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, কয়েকজন লোক এসে আমাদের এখানকার তিনজনকে কুপিয়ে গুলি করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে গেছে। আমাদের রক্ষা করেন। একই সঙ্গে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের মোবাইলেও একই নম্বর থেকে আমাদের বাঁচান বলে এসএমএম আসে। মোস্তাফিজ শফি জানান, ওই ফোন পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবকে ফোন দেন। তিনি জানান, আমরা অ্যাকশন নিয়ে ফেলেছি।র‌্যাব-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজান বলেন, কার্যালয়ের দুটি রুমে ভাঙচুর করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রক্ত পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গুলির একটি খোসা এবং একটি তাজা গুলি পাওয়া গেছে। অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলকে মারতেই হামলাকারীরা এসেছিল বলে তার কার্যালয়ে উপস্থিত একজন জানিয়েছেন।শনিবার দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে টুটুলের প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে যখন হামলা হয়, তখন কয়েকজনের সঙ্গে এই তরুণও সেখানে ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে ওই ভবনের চতুর্থ তলায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হানা দেয় দুর্বৃত্ত দল। তারা কুপিয়ে আহত করার পর বাইরে তালা মেরে চলে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে ঢোকে।ভেতরে আটকা পড়া ওই তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা (হামলাকারী) ছিল পাঁচজন। তারা ঢুকেই বলেছিল, আমরা টুটুলকে মারতে এসেছি।

পুলিশ গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসুকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রণদীপম বসু ফেইসবুকে লেখেন, কুবাইছে (কুপিয়েছে), আমি টুটুল ভাই আর তারেক।ঘটনাস্থলে উপস্থিত ওই তরুণ বলেন, তাকেসহ অন্যদের অস্ত্রের মুখে পাশের কক্ষে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।নক করা হলে দরজা খুলে দেওয়া হয়। একজন ঢুকে বলে যে সে বই নিতে এসেছে। তাকে ঢুকতে দিলে বলে, আমার এক ভাই আছে। এরপর দরজা খুললে তিনজন একসঙ্গে ঢোকে। এদের একজন স্বাস্থ্যবান। একজনের হালকা দাড়ি ছিল। যার হাতে পিস্তল ছিল, তার ১৬-১৭ বছর বয়স।প্রথমে যে ঢুকেছিল তার কাছে কালো ব্যাগ ছিল। সেখান থেকে চাপাতি বের করে। আমাদের অন্য ঘরে জিম্মি করে রাখে। পরে কুপিয়ে তালা লাগিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় গুলির শব্দ শুনি।শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ের সামনে একটি টেইলার্সের দোকানের কর্মচারী বলেন, চিৎকার শুনে আমরা ওইদিকে খেয়াল করে দেখি একটি মোটর সাইকেলে করে তিনজন দ্রুত বের হয়ে যাচ্ছে।টুটুলের বন্ধু সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, টুটুলের ফোন থেকে আড়াইটার দিকে ফোন আসে। আমি রিসিভ করি। তার কর্মচারী রাসেল আমাকে বলে, আমাদের রক্ষা করেন। আমাদেরকে কুপিয়ে তালা মেরে চলে গেছে। তখন আমি পুলিশকে জানাই।টুটুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার সঙ্গে আহত ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।অস্ত্রোপচারের পর ঢাকা মেডিকেলের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের সার্জন কে এম রিয়াজ বিকাল ৫টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, টুটুল ও তারেকের অবস্থা ক্রিটিকাল। রণদীপম আশঙ্কামুক্ত।

গত ফেব্র“য়ারিতে বইমেলার বাইরে প্রবাসী লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে জঙ্গিরা সংশ্লিষ্ট বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর। তাদের কার্যালয়ে হামলায় কারা জড়িত, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। গত ফেব্র“য়ারিতে অভিজিৎ নিহত হওয়ার পর ফেইসবুকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে টুটুল মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে প্রকাশক টুটুলসহ কয়েকজন ছিলেন ওই কার্যালয়ে। বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে হানা দেয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত।বিকাল সোয়া ৩টার দিকে লেখক রণদীপম বসু ফেইসবুকে লেখেন, কুবাইছে (কুপিয়েছে), আমি টুটুল ভাই আর তারেক।শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক শিক্ষক বলেন, আমি বাথরুমে ছিলাম। চিৎকার শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখি পাশের ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে পুলিশ তিনজনকে উদ্ধার করেছে।ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। ওই কোচিংয়ের এক ছাত্র বলেন, নিচের কলাপসিবল গেইটটিতেও তালা মেরে দিয়েছিল হামলাকারীরা। পুলিশ এসে ওই তালাও খোলে। পুলিশ গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় টুটুল, তারেক ও রণদীপমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় বলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর জানান। এদিকে টুটুলসহ তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে ভিড় জমে। ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চ বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তিনজনের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা ঘটনাস্থলে তদন্ত করে দেখছি।ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা গুলি ও খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ফেব্র“য়ারিতে টুটুলের জিডির পর কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল- জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বলেন, জিডি করেছিল কি না, মনে নেই।তারা যখনই পুলিশের সাহায্য চেয়েছে,তাদেওয়া হয়েছে।বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর।গত ফেব্র“য়ারিতে বইমেলার বাইরে প্রবাসী লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে জঙ্গিরা সংশ্লিষ্ট বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।তাদের কার্যালয়ে হামলায় কারা জড়িত, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।অভিজিৎ নিহত হওয়ার পর সরব হওয়ার মধ্যে ফেইসবুকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে টুটুল মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।গুরুতর আহত রণদীপম বসু জানান, ৩ থেকে ৪ জন যুবক এসে গুলি করে এবং কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একজনের হালকা দাঁড়ি ছিল। তিনি এটিকে জঙ্গি বা উগ্রবাদীদের হামলা বলে দাবি করেন।আরেক আহত তারেক রহিম জানান, তার বাসা এলিফ্যান্ট রোডে। সেখান থেকে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে আড্ডা দিতে যান। ৩ থেকে ৪ জন যুবক এসে গুলি করে এবং কুপিয়ে পালিয়ে যায়। হামলায় তিনিও গুরুতর আহত হন। তিনি বুয়েট থেকে সটফওয়্যার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।তারেকের মাথায় এবং দুই হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং বাম পাঁজরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর থানার অপারেশন অফিসার (পরিদর্শক) আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। যে বা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। যারা হামলার শিকার হয়েছেন তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করে শুদ্ধস্বর প্রকাশনী। চলতি বছরের ফেব্র“য়ারিতে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করার পর ফেসবুকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে টুটুল মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিলেন।