অস্ট্রেলিয়াকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে এলে তাদের ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এরপরও দলটি যদি বাড়তি নিরাপত্তা চায়, দেওয়া হবে। নিরাপত্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক হয়। বৈঠকের পরও অস্ট্রেলিয়া দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রধান শন ক্যারলের নেতৃত্ব চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার দুপুরের আগে মন্ত্রণালয়ে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেক উইলকক। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আধা ঘণ্টার এই বৈঠকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ায় হাই কমিশনার গ্রেগ উইলককও উপস্থিত ছিলেন।অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশে আসছে কি না, বৈঠকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার এই প্রতিনিধি দলের নেই। দুপুরে বৈঠক শেষে গ্রেক উইলকক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ক্রিকেট দলের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা করেছি। নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপগুলো জানানো হয়েছে। এটি অস্ট্রেলিয়া সরকার ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে জানানো হবে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে অস্ট্রেলীয় প্রতিনিধি দল সফরের সময় নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তাদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল কবে আসবে বা আসবে কি না, এ বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে মূলত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে, ক্রিকেট দলকে ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এর পরও যদি তারা বাড়তি নিরাপত্তা চায়, এটিও দেওয়া হবে।

নাজমুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলা যাবে না এটা বিশ্বাস করি না। বাংলাদেশ নিরাপদ দেশ। তাদের আমরা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি। বলেছি, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম। নিরাপত্তা দুর্বলতার অপবাদ আমরা মেনে নিতে পারি না।’এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি তারা (অস্ট্রেলিয়া) কোত্থেকে পেয়েছে, এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিনিধি দল তা জানাতে চায়নি। আরেক প্রশ্নের জাবে তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই।বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে আসা অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, তিনি আশাবাদী।ক্রিকেটারদের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল যথাসময়ে আসবে।তবে সেই আশা কতখানি তা স্পষ্ট হয়নি বৈঠকে অংশ নেওয়া কোনো পক্ষের কথায়। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের জানিয়েছি। সকল ধরনের নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ একটি ক্রিকেটপ্রেমী দেশ, তাদের কোনো অসুবিধা হবে না।হাই কমিশনার গ্রেগ উইলকক বলেন, দুই দেশই ক্রিকেট ভালবাসে। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা একটা ম্যাসেজ পেয়েছিলাম, সে বিষয়ে এখানে এসে বৈঠক করলাম। আলোচনা হয়েছে।তবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের আসা- না আসার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।দুটি টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সোমবার বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে শনিবার হঠাৎ করেই সফর পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) বাংলাদেশে ভ্রমণে বিষয়ে সতর্কতা জারি করায় সফর পেছানোর এই সিদ্ধান্ত। গত শুক্রবার ওয়েবসাইটে দেওয়া ডিএফএটির ওই নোটিসে বলা হয়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর’ আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে- এমন ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’ তাদের হাতে রয়েছে।এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিস্ময় প্রকাশ করলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রধান শন ক্যারল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে রোববার বাংলাদেশে আসেন এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন।নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো দেশের এ ধরনের বক্তব্য সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারকে জানানো হয়।এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রমের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিসিবি সভাপতি বলেন, আমি বলতে পারব না। তবে আসার দু’দিন আগে এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত হয়েছি।তিনি বলেন, আগেও বলেছি, এখনো বলছি- বাংলাদেশ ইজ এ সেইফ কান্ট্রি ফর ক্রিকেট। এদেশে কয়েকদিন আগে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা খেলে গেছে। এখন তাদের না আসার মত কিছু এখানে ঘটেনি।