দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ জুলাই ২০১৫: জনগণের জন্যই রাজনীতি তাই নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেন জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়েন সেদিকে খেয়াল রাখতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার এসএসএফের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দরবারে তিনি এ কথা বলেন।জনবিচ্ছিন্ন হলে বেঁচে থাকা নিরর্থক— উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নে প্রতিটি কর্মঘণ্টাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।এ সময় দায়িত্ব পালনে এ বাহিনীর দক্ষতা ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিবর্তন হওয়ায় নতুন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়।সরকার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর আধুনিকায়নে সবসময় কাজ করে বলেও জানান তিনি। নিরাপত্তার বাড়াবাড়ির কারণে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা যাতে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন, সে বিষয়ে তিনি এসএসএফকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্বশীলতা; এটা যেমন ঠিক। আবার সেই সাথে আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে- আমরা রাজনীতি করি, আমাদের মূল শক্তিটাই হচ্ছে জনগণ। জনবিচ্ছিন্ন যাতে না হয়ে যাই সেদিকে কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন,আমার রাজনীতি নিজের জন্য না। এদেশের মানুষ, এখনো যারা দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত, এখনো যারা সুশিক্ষা পায়নি, এখনো দিনান্তে যাদের পান্তা ফুরানোর অবস্থা- তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই কিন্তু আমার দায়িত্ব। আর সে লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু রাজনীতি। আমার নিজস্ব কোনও চাওয়া-পাওয়া নেই।জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বেঁচে থাকা নিরর্থক হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকু বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে কিছু কাজ দিয়ে পাঠান, কিছু দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। আর এই দায়িত্বটুকু যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পন্ন না হবে ততক্ষণ আল্লাহ রক্ষা করবেন। তা যদি না হত তাহলে এখনও আমার বেঁচে থাকার কথা না।পঁচাত্তরের ১৫ই অগাস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের হারানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া জানাই এজন্য যে, আমি দেশসেবার সুযোগ পেয়েছি বলেই আজকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নতি করছে।এসময় নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশেকে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কেউ যেন ভবিষ্যতে অবহেলার চোখে না দেখে সেভাবে উন্নত দেশ হিসেব গড়ে তোলা লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তার সরকার।এ লক্ষ্য পূরণে সহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আমি প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি মিনিট কাজে লাগাতে চাই দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের জীবনটাকে উন্নত করবার জন্য। সেজন্য এতটুকু সময়ও আমি নষ্ট করতে চাই না। সেজন্য আমার সাথে যারা কাজ করেন, তাদের খাটুনিটা একটু বেশিই হয়।তারপরেও দেখবেন, ফলাফলটা যখন দেশবাসী পাবে- ওটাই তৃপ্তি। আমাদের শ্রম, আমাদের কষ্টের ফলে দেশের মানুষ যাতে একটু শান্তি পায়, সুন্দর জীবন পায়, স্বস্তি ফিরে পায়, তাদের জীবনটাও উন্নত হয়।এসময় যথাযথভাবে ও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় এসএসএফ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, শৃঙ্খলা, সততা ও দায়িত্বশীলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হুমকির বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে।প্রতিনিয়িতই কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি তৎপরতার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রযুক্তি ভালো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, আবার এই প্রযুক্তিই কিন্তু ধংসাত্মক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হুমকির ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “যখনই সরকারে এসেছি তখনই আমোদের প্রচেষ্ট ছিল বাংলাদেশে কখনোই যেন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মোহাম্মদ আমান হাসান।প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে সানজিদা আক্তারের আঁকা একটি চিত্রকর্ম উপহার দেন তিনি।দরবার হলের অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন।