satkera

দৈনিকবার্তা-সাতক্ষীরা, ১ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলায় ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলায় কলারোয়া পৌরসভার সদ্য বরখাস্ত হওয়া মেয়র আক্তারুল ইসলামসহ ৪ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বুধবার মামলার ধার্য্য দিনে জেলা ও দায়রা জজ আদাললে আসামীরা আত্মসমর্পন করে জামিন চাইলে বিজ্ঞ বিচারক জোয়ার্দ্দার আমিনুল ইসলাম দুই মামলার চার্জ গঠন করে আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আত্মসমর্পনকারী আসামীরা হলেন সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, তুলসিডাঙ্গা গ্রামের আলতাফ হোসেন ও গদখালি গ্রামের মফিজুল ইসলাম।

সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের সরকারি কৌশলী (পিপি) ওসমান গণি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলায় ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলায় বুধবার শুনানির দিন ধার্য্য ছিল। বেলা পৌনে ১২টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জোয়ার্দ্দার আমিনুল ইসলামের আদালতে কলারোয়া পৌরসভার সদ্য বরখাস্ত আক্তারুল ইসলামসহ ৪ জন আত্মসমার্পন করে জামিন চাইলে বিজ্ঞ বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে আদালতে প্রেরণ করে। ফলে এই মামলায় বর্তমানে ১৬ জন আসামী কারাগারে আটক আছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে জেলা বিএনপি’র তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলে নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তাঁর গাড়ি বহরে হামলা চালায়।

দীর্ঘ ১২ বছর পর গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিষ্ফারক আইনে ৫০ জন বিএনপির নেতা কর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চাজর্শীট দাখিল করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চলানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে গুলি ও বোমা উদ্ধার করা হয়।

গঅস্ত্রআইনের ৩ ও ৪ এবং বিস্ফোরক আইনের ১৯(ক) ধারায় চাজর্শীটভুক্ত আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, কলারোয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান আক্তারুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব, যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক আব্দুস ছাত্তার, যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচচু, মির্জাপুর গ্রামের তামিম আজাদ মেরিন, তুলসিডাঙ্গা গ্রামের জাভিদ রায়হান লাকি, একই গ্রামের ট্রলি শহিদুল, মনিরুল ইসলাম, ইয়াচিন আলি, শেলি, আলতাফ হোসেন, নাজমুল হোসেন, কনক, ক্ষেত্রপাড়া টাইগার খোকন, রিপন, আব্দুল মজিদ, আব্দুস ছামাদ, একই গ্রামের খালেদুজ্জমান রোমেল, কলারোয়া বাজরের ব্যবসায়ি কামরুল ইসলাম, রামকৃষ্টপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের বিদার হোসেন, গাজনা গ্রামের সোহাগ, ওফাপুর গ্রামের মাহফুজ মোল্ল্যা, একই গ্রামের মাফুজুর রহমান, ঝিকরা গ্রামের সনজু, একই গ্রামের কামরুজ্জমান ও গোলাম রসুল, সিংনাল গ্রামের সাইফুদ্দিন, কয়লা গ্রামের শাহেব আলি, বৈদ্যপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম পুটুনি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, একই গ্রামের আব্দুস ছামাদ, গদখালি গ্রামের মফিজুল ইসলাম, হুলহুলিয়া গ্রামের হাছান আলি, রায়টা গ্রামের ময়না, দরবাসা গ্রামের জহিরুল ইসলাম, কেঁড়াগছি গ্রামের আব্দুল মালেক, শুভংকরকাঠি গ্রামের মাজাহারুল হক, কাজিরহাট নজরুল ইসলাম ও ইলিশপুর গ্রামের আলাউদ্দিন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলায় শুনানি করেন সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এড. ওসমান গণি, অতিরিক্ত পিপি এড. আজহারুল ইসলাম, এপিপি এস এম আতাউর রহমান, এপিপি এড. তৌহিদুর রহমান শাহীন, এপিপি শেখ তামিম আহম্মেদ সোহাগ, এড. সাইদ প্রমুখ। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এড. ওসমান গণি আরো বলেন, বিএনপি জোট সরকার মামলা নেয়নি। তারা মামলার কার্যক্রম বিভিন্ন ভাবে ঘুরাতে চেয়েছিলো। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলায় চার্জ গঠন করা হয়েছে।

এর মাধ্যমে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে,আসামীদের জামিন শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড. আব্দুস সাত্তার, জর্জ কোর্টের এপিপি এড. প্রসাদ কুমার সরকার ও এড. জিল্লুর রহমান প্রমুখ। এ ঘটনায় আদালত পাড়ায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে জর্জ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এড. ওসমান গণি বলেন, এটা রাষ্ট্রের বিরোধীতা করা। এটা নেক্কার জনক ঘটনা। তিনি আরো বলেন, আমি যখন রাষ্ট্রের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিচ্ছি তখন সরকারি দুই আইনজীবী এড. প্রসাদ কুমার ও এড. জিল্লুর রহমান এপিপি’র দায়িত্বে থেকেও প্রধানমন্ত্রীর মামলায় বিরোধীতা করায় আমি স্তব্দ হয়ে পড়ি। তারা সরকারের সাথে খন্দাকার মোস্তাকের মতো বেইমানি করেছে। তিনি আরো জানান, তাদের বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।