coxbazar_284763
দৈনিকবার্তা-কক্সবাজার, ২৭ জুন:
 টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩ লক্ষাধিক মানুষ।জেলায় বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে বিভিন্ন ঘটনায় এই পর্যন্ত ৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিখোঁজ রয়েছে ২ জন। বিভিন্ন স্থানে বেঁড়িবাধ ও কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মিতার ছড়া এলাকায় পাহাড় ধ্বসে মারা গেছে মো. শফির ছেলে মো. রিদুয়ান (১০)।বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের আমতলিয়া পাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান মোস্তাক আহমদের স্ত্রী হালিমা বেগম (৩০)।শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনা এলাকায় পাহাড় ধ্বসে চাপা পড়া আমির হোসেন এর মৃতদেহ উদ্ধার করা করা হয়। ৪ সন্তানের জনক আমির হোসেন স্থানীয় ছমি উল্লাহর ছেলে। বৃহষ্পতিবার রাতে পানি চলাচলের নালা কেটে দেয়ার সময় তার উপর পাহাড় ধ্বসে পড়েছে।

শুক্রবার দুপুর ২টায় রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতারপাড়া এলাকায় পানিতে ডুবে প্রাণ হারান খতিজা বেগম (৩৮)। শুক্রবার সকালে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দক্ষিণ দ্বীপ ফতেখাঁরকুল এলাকার জুনু মিয়া (৬০)।বৃহষ্পতিবার সকালে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজল বিল এলাকায় বন্যা কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার সময় নৌকা ডুবিতে দুইজন নিখোঁজ হয়েছেন। এরা হলেন, বশির আহমদের মেয়ে কামরুনাহার (২২) ও এরশাদ উল্লাহর মেয়ে তরিকা হাসনাত (৪)।স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ এ দুজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ হোসেন ৫ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজল বিল এলাকায় নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ ২ জনের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।উপজেলার বিভিন্নস্থানে কাঁচাঘর বিধ্বস্ত, পাহাড়ধ্বস, গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার ফলে রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে ৩দিন যানবাহন চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রবল বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে চকরিয়া উপজেলার কাকারা এলাকায় কাওছার রহিম (১৩) নামে এক শিশু মারা গেছে। সে ওই এলাকার ফরহাদ রেজার পুত্র।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলাম জানান- ভারি বর্ষণে বন্যায় পৌরসভা ছাড়াও ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এতে কম করে এক লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।পেকুয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের লোকালয়ে ব্যাপকভাবে ঢুকে পড়েছে ঢলের পানি। এতে এসব ইউনিয়নের লোকালয় পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ডুবে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো। হারবাং, বরইতলী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সিংহভাগ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকায় করে যাতায়াত করছে এসব ইউনিয়নের মানুষ। বিএমচর ও কোনাখালী ইউনিয়নের কন্যারকুম পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেওয়ায় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন ঠেকানোর কাজ করছে।সেন্টমার্টিনে ঝড়ে হওয়ায় গাছ চাপা পড়ে মা ও ছেলে মারা গেছেন। এতে ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি বন্দি হয়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি।শুক্রবার সকালে সের্ন্টমাটিন দ্বীপে প্রবল বর্ষন সহ বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া। এতে গাছ চাপা পড়ে মারা যায় কোনারপাড়া নুর মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) ও শিশু পুত্র মো জিশান (৪)।ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বিধ্বস্ত ও পানি বন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধশত ঘরবাড়ি।