দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১০ জুন: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ(রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে দালালের কাছে। দিন দিন দালালদের কার্যক্রম দৌরাত্ম বাড়তেই আছে। আর এতে করে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। আর এক্ষেত্রে পুলিশ অসহায় । গত কয়েকদিন আগে পাবনা থেকে আসা রুবিনা নামের এক রোগীর স্বজন বহির্বিভাগের সামনে কান্নাকাটি করতে দেখে কারণ জানতে জিজ্ঞেস করতে তিনি জানালেন, এক দালাল তাকে ভাল রিপোর্টের কথা বলে মেডিসন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে ২০০০ টাকা নেয়। কিন্তু ডাক্তারের এসে এ এ রিপোর্ট দেখালে তা সঠিক নয় বলে জানান। পরে পুলিশ কে বললে তিনি গিয়ে ৫০০টাকা ঐ দালালের কাছ থেকে আদায় করে দেন।
এদিকে কিছুদিন আগে বাগমারার এক গরীব রোগীকে রাতের বেলায় এক দালাল ভাগিয়ে নিয়ে যায় লক্ষীপুরের আরোগ্য নিকেতনে। ঐ রোগীর প্রেসক্রিপশনে ৬টি ওষুধের নাম লেখা ছিল। কিন্তু দোকানদার কৌশলে ৭নং এ একটি অতিরিক্ত ওষুধ লিখে দিয়ে বাড়তি ২৩০০টাকা আদায় করে ঐ রোগীর কাছ থেকে এমন গুরুতর অভিযোগও রয়েছে ঐ দোকানের বিরুদ্ধে। পরে রোগী জেলা আ’লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে জানালে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে টাকা আদায় করে দেন বলে এক সূত্রে জানা গেছে।প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন ঘটনা।
এদিকে দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনে লাইফ গার্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় একটি জিডি করেছিলেন সুলতানা নামের এক রোগীর আত্মীয়। আর এভাবে দালালের খপ্পড়ে পড়ে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর লোকজন। উল্লেখ্য, রামেক হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর এবং ইমার্জেন্সি এই তিন বিভাগে প্রতিদিন ১০০’র মত দালাল রুগি ধরার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। এদের মধ্যে বেশ কিছু চিহিৃত দালাল রয়েছে। এদের মধ্যে বকশির ছেলে আনার, মৃত হায়েদের ছেলে মিজান, বসুয়ার নাসেরের ছেলে রবিউল, বহরমপুরের বুলবুল, ল্যাংড়া মসিউর, রোকিয়া, আসমা, তোহসিনা, মুসলিমা, কবির, নজরুল, আলিম, লালন, ওসমান, কালু, ডালিম, মাসুদ, সেন্টু, আপেল প্রমুখ দালাল হিসেবে পরিচিত মুখ। এসব চিহিৃত দালালের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে এ হাসপাতালের রোগীরা।
আর এসব দালালদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ওষুধের দোকান মালিকরা। এসব দালালদের বেশির ভাগই হলো লক্ষীপুরের আরোগ্য নিকেতন নামের একটি ওষুধের দোকান মালিক পলাশের। ঐ মালিকের মেডিসন নামে আরও একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারও রয়েছে। সুত্রে জানা গেছে, আরোগ্য নিকেতন ও মেডিসন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ৫০ জনেরও অধিক দালাল রামেক হাসপাতালে সক্রিয় ভূমিকা রাখে রোগী ভুলাতে। এছাড়া লাইফ গার্ড, কিওর নার্সিং হোম, লেজার ডায়াগনষ্টিকসহ হাসপাতাল এলাকার আশে পাশের অন্যান্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের আরও ৫০জনের মত দালাল রোগী ভাগানোর কাজ করে হাসপাতালে। দালালী, চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্ম রোধ করার জন্য রামেক হাসপাতালের অভ্যন্তরে একটি পুলিশ বক্স রয়েছে। এছাড়া একই কাজে ক্লিনিকপাড়া খ্যাত লক্ষীপুর মোড়ে রয়েছে আরেকটি পুলিশ বক্স। কিন্তু এসব চিহিৃত দালালদের কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছেনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরোগ্য নিকেতন ও মেডিসন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক পলাশ এ এলাকার পুলিশ প্রশাসন কে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে রাখে, যেন তার কোন দালাল কে পুলিশ না ধরে। সূত্র জানায়, পুলিশ এ মালিকের কোন দালালকে ধরলে ‘টাকা নিয়ে দালাল ছেড়েছে’ বলে উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে সে ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে থানা, পুলিশ কমিশনার এমনকি পুলিশ হেড কোয়ার্টারে পর্যন্ত অভিযোগ করে। সম্প্রতি হাসপাতাল ও লক্ষীপুর বক্সের কয়েকজন ইনচার্যের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ হওয়ায় তারা ঝামেলা এড়ানোর জন্য কোন দালাল ধরেনা বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। দালালের গডফাদারের কাছে অসহায় যেন এখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ প্রশাসন। এতে করে ফের রামেক হাসপাতালে দালালদের উৎপাত বেড়েছে সীমাহীনভাবে। এছাড়া হাসপাতাল বক্সের কিছু পুলিশ সদস্য বিশেষ করে কনস্টেবলদের সাথে দালালরা সখ্যতা গড়ে তোলে নিয়মিত তাদের কাজ করে যাচ্ছেন অনায়সে।
সম্প্রতি রামেক হাসপাতালের আউটডোর, ইমার্জেন্সির সামনে রোগী ধরা দালাল, মাইক্রো ও এ্যাম্বুলেন্সের দালাল এবং রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায় এরকম কিছু পুলিশ সদস্যকে। আর এসব কারণে রামেক হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম কমছেনা বলে অভিযোগ করেছেন খোদ হাসপাতালের এক স্টাফ। জানা গেছে, এসব ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিকে প্রকৃতপক্ষে তেমন কোন চিকিৎসা হয়না। রোগীর টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা হয় মালিক আর দালালদের মধ্যে। ওষুধ বিক্রির জন্য দালালরা পায় ১৫-৩০%, ডায়াগনষ্টিকের জন্য পায় ৩০-৫০% পর্যন্ত। ক্লিনিকের দালালরা পেয়ে থাকেন ভাল মানের রেট।