.দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ মে: তাপমাত্রা এখনও ৩৬ ডিগ্রি ছোঁয়নি৷ তীব্র নয়,মৃদু তাপমাত্রা বইছে এখনও৷ অথচ মনে হচ্ছে তার বহুগুণ বেশি গরম৷ বাতাসে অত্যধিক জলীয় বাষ্প৷ সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টিশূন্যতা৷ এ অবস্থায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্তি৷ তাপদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন৷ ব্যাঘাত ঘটছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়৷ এদিকে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারিপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে৷আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, শনিবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘন্টায় টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চলসহ রংপুর, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে৷ এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানতা শুষ্ক থাকতে পারে৷সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে৷আগামী ৪৮ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাসে বলা হয়, এসময়ে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে৷এছাড়া আগামী ৫দিনের আবহাওয়া অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাসে বলা হয়, এ সময়ে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে৷আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ ও তত্সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে৷ যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত৷ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু রেগুন উপকূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে৷
গরমে খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ৷ তবে গরমের কারণে কর্মজীবী মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে৷ অতিরিক্ত ঘামে পানিশূন্যতায় একটুতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ৷ আবহাওয়া অফিস বলছে, এ গরম আরও কয়েকদিন থাকবে৷ তবে দুই-একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷ বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে৷ প্রচণ্ড তাপদাহের ফলে নিত্যনৈমিত্তিক কাজকর্মে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ৷ গরমে একটু প্রশান্তির খোঁজে কেউ বা আশ্রয় নিচ্ছেন গাছের নিচে, আবার কেউ বা বৈদ্যুতিক পাখার নিচে৷ অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না৷ গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের দোকানগুলোতে ঠাণ্ডা পানীয় পান ও ফলমূল খাওয়া বেড়ে গেছে৷ এ ছাড়াও সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণ স্যালাইন ও ডাবের পানি পান করতে দেখা গেছে৷ অতিরিক্ত গরমে বিদু্যতের চাহিদাও বেড়ে গেছে কমপক্ষে ৫শ’ মেগাওয়াট৷ বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতের কোনো এয়ারকন্ডিশন এক মুহূতের্র জন্যও বন্ধ হচ্ছে না৷ এ অবস্থায় অতিরিক্ত বিদ্যুতের জোগান দিতে গিয়ে প্রায়শ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ও ট্রান্সফরমার ট্রিপ করছে৷
আবহাওয়া অফিস বলছে, আজকালের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে তাপপ্রবাহের আরও বিস্তার হতে পারে৷ এ আর্দ্রতার দাপটে শুক্রবার ও শনিবার ঢাকা ও আশপাশের এলাকা তপ্ত হয়ে ওঠে৷ মানুষজনের জীবন ছিল হাঁসফাঁস৷ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, প্রকৃতির যা হালচাল, তাতে আগামী ক’দিনে তা আরও বেশি হওয়ার আশংকা৷ সকালের মেঘলা আকাশ খানিক আশা জাগালেও বেলা বাড়তেই তা ভেঙেচুরে খানখান হয়ে যায়৷ কেননা ততক্ষণে গনগন করে তাপ ছড়াতে শুরু করে সূর্য৷ মাটি থেকে তাপ ঠিকরে বেরোয়৷ শরীর থেকে ঘাম ঝরে৷ কিন্তু সেই ঘাম শুকোতে পারছে না, উল্টে গায়ে জমে থাকছে৷ একটু হাওয়া নেই কোথাও৷জমা ঘামের চাপে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে হার্টবিট, বাড়ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের হারও৷ সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে জনগণ৷
শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পূর্বাভাসে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দেশের প্রায় সব এলাকায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল৷ বৃষ্টিও বেশ কম হয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সৈয়দপুরে ২৫ মিলিমিটার৷ রাজধানী ঢাকায় ১১, রংপুরে ২০ ও ময়মনসিংহে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে৷তাপপ্রবাহের জন্য দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও রাজশাহী জেলায়, ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷খুলনায় ৩৭ দশমিক ৫, বরিশালে ৩৬ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ৬ ও রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগি সেলসিয়াস৷তবে গরম পড়লেও আজ রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বজ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর৷ ঝাঁজাল রোদ থেকে রক্ষা পেতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষদের ছাতার ছাউনিতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে৷ তবে আবহাওয়া অধিদফতর বৃষ্টির সুখবর দিয়ে রেখেছে৷ বলেছে, মৌসুমী বায়ু প্রতিবেশী মিয়ানমারের ইয়াগুন শহর পর্যন্ত চলে এসেছে৷ তারা জ্যৈষ্ঠের এই দহন খুব একটা স্থায়ী হবে বলে মনে করছেন৷ তাদের মতে, খানিকটা ঝড়বৃষ্টি, এর সঙ্গে মৌসুমী বায়ু যোগ হলে গরমের দাপট কমে যাবে৷
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আলম বলেন, ১০ জুনের মধ্যে মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের আকাশে চলে আসতে পারে৷ তাই বৃষ্টি হলে এবার গরমের মাত্রা অন্যান্য বছরের মতো বাড়বে না৷তীব্র গরমে রাজধানীসহ সারা দেশের অফিস-আদালত ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে বলে বিদু্যত্ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়৷তারা বলছে,বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতের এয়ারকন্ডিশনগুলো এখন অফ করা হচ্ছে না৷ দিনরাত ২৪ ঘন্টা এগুলো চালু থাকছে৷ এ কারণে ২-৩ দিন ধরে কমপক্ষে ৫শ’ থেকে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা বেড়ে গেছে৷ এ অবস্থায় অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পিডিবিকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে৷ তবে পিডিবি বলছে, পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ থাকলেও জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনের কারণে তারা অতিরিক্ত চাহিদার বিদ্যুত্ দিতে পারছেন না৷ কোনো এলাকায় অতিরিক্ত বিদ্যুত্ দিতে গেলেই সঞ্চালন লাইন ও ট্রান্সফরমার ট্রিপ করছে৷ রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, গ্রীষ্মের ছুটিতে মালয়েশিয়া থেকে বেড়াতে এসেছে ছেলে৷ কিন্তু দু’দিনেই ছেলে পালাই-পালাই করছে৷ মালয়েশিয়া ফেরার টিকিটের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে বিমান অফিসে গিয়ে টিকিট কেটে এনেছেন৷
এদিকে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে দেখা গেছে৷ শহরের নানা জায়গায় বিদ্যুত্ বিভ্রাট, এমনকি অনেক হাসপাতালেও তীব্র গরমে রোগীদের ছটফট করতে দেখা গেছে৷ তীব্র গরমের মধ্যে যোগ হয়েছে পানির সমস্যা৷ গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির কষ্ট দেখা গেছে৷ কোনো কোনো এলাকায় পানি পাওয়া গেলেও সে পানি ছিল ময়লা-আবর্জনা আর কালো কেমিক্যাল যুক্ত৷ যার কারণে মানুষের কষ্ট ও বিরক্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়৷ গত কয়েকদিনে দু’-এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাতে অস্বস্তি কমেনি৷গরমের কারণে বাড়িতে বাড়িতে শিশুরা জ্বর ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে৷ মহাখালী ডায়রিয়া হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর ভিড় করছে৷ মোহাম্মদপুর এলাকার আবদুল মজিদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গরমের তীব্রতা যেভাবে বেড়ে গেছে তাতে মনে হচ্ছে মানুষ মরেই যাবে৷ তীব্র গরমে শরীরের সবকিছু বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে প্রচুর পরিমাণ স্যালাইন ও ডাবের পানি খাচ্ছেন বলে জানান৷
তবে প্রচণ্ড গরমকে পুঁজি করে নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে ও ফুটপাতে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা তরমুজ, ডাব, লেবুর শরবত, আখের রস, পানীয় ও ফলমূলের দোকান বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে৷ এসব দোকানে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়৷ তবে গরমের মধ্যে তরমুজ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা৷ তরমুজ ব্যবসায়ীরা প্রতি পিস ১০ টাকা ও প্রতিটি তরমুজ ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন৷ এছাড়া প্রতি গ্লাস বরফ মিশ্রিত আখের রস, লেবুর শরবত ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে৷
বরিশাল: গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরমে জেলা ও নগরীতে বিপর্যসত্ম হয়ে পড়েছে জনজীবন৷ তীব্র তাপমাত্রায় অস্থির হয়ে পড়েছে এখানকার জীবনযাত্রা৷
গতকাল বরিশালে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
কিছুটা কমে ৩৬ ডিগ্রিতে রয়েছে তাপমাত্রা৷ একপশলা বৃষ্টির আশায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর জেলার বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে৷
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. পলাশ চৌধুরী জানান, মূলত বৃষ্টিপাত না হওয়ার দরম্নণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ প্রচন্ড তাপপ্রবাহে সর্বত্র অস্বসত্মিকর গরম অনুভূত হচ্ছে৷ গত প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে ৩৬ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছে৷ আগামী ১০-১২ দিন পর্যনত্ম এমন অবস্থা থাকতে পারে বলে জানান তিনি৷
গত ৭ দিন ধরে এখানে বেড়েই চলছে তাপ প্রবাহ৷ বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপরের দিকে উঠছে তাপমাত্রার পারদ৷ সেই সাথে বাড়ছে জনমানুষের দুর্ভোগ৷ দৈনন্দিন কাজে চলে আসে স্থবিরতা৷ খুব জরম্নরি কাজ না থাকলে দুপুরের দিকে ঘর থেকে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ৷ ফলে এই সময়ে অনেকটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে পুরো নগরী৷ আর এতে সবচেয়ে বেশি ভোগানত্মিতে পড়ছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষজন৷
এদিকে প্রচন্ড গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে তৃষ্ণার্তর্ মানুষ ঠান্ডা শরবত, ডাব, তাল ইত্যাদি দোকানে ভিড় করছে৷ নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে ঠান্ডা বেলের শরবত, লেবুর শরবতসহ বিভিন্ন সরবত বিক্রির ধুম পড়েছে৷ মানভেদে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকায় এসব শরবতে প্রাণ জুড়া”েছন সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ৷ এ ছাড়া ডাব ও তালের বিক্রিও বেড়ে গেছে প্রচন্ড তাপ প্রবাহে৷
জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ টি এম মিজানুর রহমান গরমের এই দিনগুলোতে সুস্থ থাকার জন্য বেশি করে পানি পানের পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রচন্ড গরমে সবচেয়ে প্রধান কাজ হচ্ছে বেশি করে নিরাপদ পানি পান করা৷ লবণ শূন্যতা পূরণের জন্য খাবার স্যালাইন খাওয়ার পাশাপাশি তিনি বেশি তেল, ঝাল ও মশল্লাযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, যে কোন খাবারের সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সবাইকে তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে৷
রাজশাহী: রাজশাহীতে অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে৷ যতই দিন যাচ্ছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মহানগরী৷ শুক্র ও শনিবার প্রখর রোদে পুড়ছে পথ-ঘাট৷ বাতাসে যেন আগুনের হলকা৷ দিনভর তাপপ্রবাহ ও রাতে ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন৷ বৃষ্টির জন্য চারিদিকে যেন হাহাকার পড়ে গেছে৷রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র জানান, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে৷ এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আর সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ বাতাসের আদর্্রতা ছিল সকাল ৬টায় ৯৫ শতাংশ এবং বেলা ৩টায় ৫৫ শতাংশ৷তিনি জানান, গত ১৯ মে নগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ ২০ মে রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ গতকাল ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ ফলে প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়ছে রাজশাহী অঞ্চলে৷এদিকে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করলেও আজ তা ৩৯ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে৷ এর ওপর দুপুরে বাতাসের আদর্্রতা কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে৷ ফলে তীব্র গরমে কাহিল হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ৷ অব্যাহত তাপপ্রবাহে রাজশাহীর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা চরমে পৌঁছেছে৷ অসহনীয় গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে৷ প্রকোপ বেড়েছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের৷ শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে৷ গাছে থাকা আম ও লিচু শুকিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে৷ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে৷প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়৷ এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা৷ যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা৷ এবার সে রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন রাজশাহীবাসী৷ দুই সপ্তাহ আগে ভারি বুৃষ্টির পর থেকে টানা তাপপ্রবাহ চলছে৷ ফলে তপ্ত মাটি ভিজে যাওয়ার মতো এক পশলা বৃষ্টির দিকে মানুষ আকাশের দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে৷ ভ্যপসা গরমে মানুষের সাধারণ কার্যক্রম স্তবির হয়ে পড়েছে৷ দুপুরে নগরীর রাস্তাঘাটগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ছে৷ প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বেরুতে ভয় পাচ্ছে৷ সূর্যতাপে যেন শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার অবস্থা৷ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে মানুষ যখন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না সেখানেও আছে বিপত্তি৷ ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে ঘরের মধ্যেও মানুষের নাজেহাল অবস্থা৷ তবে রাজশাহী বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোডর্র সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদ্যুত্ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে৷বিউবোর একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে এ মুহূর্তে প্রচণ্ড গরম বিরাজ করছে৷ ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েকগুন৷ কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদু্যত্ সরবরাহ না থাকায় নগরীতে সামান্য লোডশেডিং হচ্ছে৷
পাবনা:পাবনা অঞ্চলে গত ৩ দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে৷ প্রখড় রোদ আর প্রচন্ড গরমে মানুষসহ প্রাণীকূলে নাভিশ্বাস উঠেছে৷ স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন৷গরমে শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঠিকমত কাজ করতে পারছে না৷ জেলার ঈশ্বরদীআবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে৷গত ২ সপ্তাহ ধরে পাবনা অঞ্চলে কোন বৃষ্টি নেই৷ ফলে রোদের তাপে মাটি গরম হয়ে রয়েছে৷ এর মধ্যে গত ৩ দিন ধরে চলছে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ৷ঘরের বাইরে গেলে গরম বাতাস মানুষের শরীরে আগুনের ফুলকার মত বিধছে৷ প্রচন্ড গরমের কারণে রিকশা চালক, দিন মজুরসহ শ্রমজীবারা কাজ করতে পারছে না৷ নিতানত্মই প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরেরও বাইরে বের হচ্ছে না৷এদিকে কয়েকদিন ধরে গরমের কারণে শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডায়েরিয়া ও হিটস্ট্রকসহ নানা রোগে আক্রানত্ম হচ্ছে৷
এদিকে, প্রতিবেশী ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে গত তিন দিনে তীব্র তাপদাহে দুই শতাধিক মানুষের মৃতু্য হয়েছে৷ এর মধ্যে শুক্রবারই মারা গেছে শতাধিক মানুষের৷ দুই রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রা এখন ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি৷ স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, তাপমাত্রা অতীতের রেকর্ডকেছাড়িয়ে যেতে পারে,বাড়তে পারে আশঙ্কাজনক হারে প্রাণহানিও৷আবহাওয়া অধিদফতর ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো শনিবার এ খবর জানিয়েছেসংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, তাপদাহে সবচেয়ে বেশি মৃতু্যর খবর আসছে তেলেঙ্গানার আদিলাবাদ, নিজামাবাদ, করিমনগর, মেদাক, বারঙ্গল, খাম্মাম, রঙ্গারেড্ডি, হায়দরাবাদ, নালগোনদা ও মাহবুবনগর জেলা থেকে, আর অন্ধ্র প্রদেশের পূর্ব গোড়াবাড়ি, পশ্চিম গোড়াবাড়ি, কৃষ্ণ, গুন্তুর, প্রকাশম, নেলোর, চিত্তর, কাদাপা ও কুর্নুল জেলা থেকে৷বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই রাজ্যে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর এলেও শুক্রবার মারা যায় আরও শতাধিক মানুষ৷
তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাপদাহের কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে হিটস্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত লোকজনের ঢল নেমেছে রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে৷ এদের চিকিত্সা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিত্সকদের৷
একই ধরনের খবর আসছে অন্ধ্র প্রদেশ থেকেও৷ সে রাজ্যের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় দুর্যোগ হয়ে ওঠা এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিত্সকসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ তত্পরতা দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ প্রত্যেকটি জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি মেডিকেল টিমও৷দুই রাজ্যের কর্মকর্তারাই এই গরমে খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন৷ যদি জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লাগেও, তবে অন্তত তাপদাহ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে রাখতে বলেছেন৷ কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অধিদফতরের (আইএমডি) কর্মকর্তারা জানান, দুই রাজ্যেই গড় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে৷ এই তাপমাত্রার কারণে তাপদাহ সতর্কতায় তীব্র (সিভিয়ার) পর্যায় ঘোষণা করা হয়েছে৷
আইএমডির কর্মকর্তারা আরও বলছেন, যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে৷২০০২সালের ১১ মে তত্কালীন একীভূত অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (বিজয়াবাদ)৷ সেই রেকর্ড তাপমাত্রায়ও এতো প্রাণহানি হয়নি৷স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এছাড়া, তাপদাহ থেকে নিজেদের বাঁচাতে জনগণকে সর্বোচ্চ সচেতনতা দেখানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে৷