দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মার্চ: একটি গোষ্ঠী বা দলের জন্য দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে তা হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদী কার্যক্রম নয়,দেশের মানুষ উন্নতি চায়। বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত স্বাধীনতাপুরস্কার ২০১৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।পুরস্কার প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।নিজেদের রাজনৈতিক ভুলের কারণে একটি দল জঙ্গি বাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে অভিযোগ করে এ থেকে উত্তরণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।এ বছর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচ ক্যাটাগরিতে ৭ জনকে দেশের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন: স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী, শহীদ মামুন মাহমুদ ও শাহ এএমএস কিবরিয়াকে মরণোত্তর, সাহিত্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিতে আবদুর রাজ্জাক, গবেষণায় ড. মো. হোসেন মণ্ডল ও সাংবাদিকতায় সন্তোষ গুপ্তকে মরণোত্তর।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্টজন ও তাদের স্বজনদের প্রত্যেকের হাতে স্বর্ণপদক, দুই লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।তাদের এ প্রাপ্তি নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণা বলে জানান অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছেন, কিছু লোকের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে, কারো মুখাপেক্ষা হতে হবে, দেশ পিছিয়ে যাবে এটা আমরা চাই না। এ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।
বিএনপি-জামায়াতের চলমান কর্মসূচি ও সহিংসতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধ্বংস নয়, আমরা শান্তি চাই, উন্নয়ন চাই। জঙ্গিবাদ নয়, শান্তিপূর্ণ দেশ চাই। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব সভায় শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।তিনি বলেন, আমাদের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে আমরা তা ধরে রাখতে চাই। আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে চাই। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আসুন আমরা সকলে মিলে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করি।
শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের স্বাধীনতা আমরা এনেছি, এদেশকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে বসানো এটাই আমাদের লক্ষ্যে। আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কারো মুখাপেক্ষী নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবো।বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সহিংসতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত জ্বালাও পোড়াও করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকায় তারা সফল হয়নি।
তিনি বলেন, একটি বছর শান্তিপূর্ণভাবে আমরা দেশ পরিচালনা করেছি। দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে অনেক এগিয়েছে। আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ঠিক সে সময় এই জানুয়ারি মাস থেকে তারা আবার জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছে। কিন্তু কার স্বার্থে তারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আজকে আকাশে বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ।খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কেন এই অবস্থা হবে। রাজনীতিতে কেউ ভুল করলে তার খেসারত কেন জনগণকে দিতে হবে? মানুষের ওপর জুলুম অত্যাচার এটা সহ্য করা যায় না। অনেক ধৈয্য ধরে আমরা এসব মোকাবেলা করছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে। কিন্তু মানুষের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে তা কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়।
স্বাধীনতা বিরোধীদের স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে অতীতে এ পুরস্কারকে কলঙ্কিত করা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা বানানো হয়েছিলো। যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।এ সময় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ মন্ত্রি পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং কুটনৈতিকরা উপস্থিত ছিলেন।