দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ মার্চ: আদালতের অনুমতি পেলেই দু’একদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ল্যাবে বিজ্ঞান লেখক-ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের আলামত পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, আদালতের অনুমতি পেলে হত্যাকাণ্ডের আলামত এফবিআই সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাবেন এবং সেখানে এসব আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার প্রধান সন্দেহভাজন শাফিউর রহমান ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজনের নাম বেরিয়ে এসেছে এবং তাদের তালিকা করা হয়েছে।এদের মধ্যে রয়েছে ফেইসবুকে ফারাবীর ১০ জন অনুসারি। তাদেরকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান ডিএমপির এই মুখপাত্র।
উল্লেখ্য, একুশে বইমেলায় নিজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অভিজিৎ-রাফিদা দম্পতি গত ১৬ ফেব্র“য়ারি দেশে আসেন।বুয়েটের সাবেক শিক্ষক অভিজিৎ পেশায় প্রকৌশলী আর বন্যা চিকিৎসক।ধর্মবিষয়ক ও বিজ্ঞানভিত্তিক লেখালেখির কারণে উগ্রবাদীরা অভিজিৎকে বেশ কিছুদিন ধরেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।গত ২৬ ফেব্র“য়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিতকে। গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। খুনিরা পালিয়ে যায় সবার চোখের সামনে অথচ পুরো এলাকায় ছিল তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওই হামলার পর টিএসসির ৫০ গজ উত্তরে ঘটনাস্থল থেকে দুটি চাপাতি ও একটি ব্যাগ আলামত হিসাবে সংগ্রহ করে পুলিশ।ল্যাপটপের ওই ব্যাগে কয়েকটি পত্রিকা ভাঁজ করা ছিল, যা চাপাতিগুলো মোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা।এছাড়া একটি জিন্স প্যান্ট ও কয়েকটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেটও পাওয়া যায় ব্যাগের ভেতরে।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অভিজিৎ প্রকৌশলী হিসাবে কাজ করে আসছিলেন। হামলার ঘটনার দুদিন পর আহত বন্যাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের প্রেক্ষিতে এফবিআইয়ের একটি দল ইতোমধ্যে ঢাকায় তদন্ত শুরু করেছে। এ দলের চার সদস্য গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ছবি সংগ্রহ করে।তারা অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শাফিউর রহমান ফারাবী নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যার বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে লেখালেখির জন্য অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।ফারাবী ছাড়া আর কারা অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল বা ফেইসবুকে মন্তব্য করে হত্যায় উৎসাহ দিয়েছিল তাদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে রোববার জানিয়েছিলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল। ফেইসবুকে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন, এমন দশজনের একটি তালিকার কথাও তিনি বলেছিলেন।এই তালিকা প্রসঙ্গে সোমবার তিনি বলেন, ফারাবীর ফেইসবুক পাতায় যারা অভিজিৎ হত্যাকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন কমেন্ট করেছে তারা এ হত্যায় জড়িত থাকতে পারে, এমন সন্দেহ রয়েছে আমাদের।
ফারাবীকে তারা গুরু মানে। ফারাবী এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন, নাকি তার অনুসারিরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব। প্রাথমিক অনুসন্ধানে হুমকিদাতাদের অধিকাংশই ছাত্র বলে আমরা জানতে পেরেছি।অভিজিৎ হত্যায় জড়িতদের সনাক্ত করতে গোয়েন্দা পুলিশ এফবিআইয়ের সঙ্গে তথ্য ও মতবিনিময় করছে বলে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যোগ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও জঙ্গিদের সন্দেহ করছে বলে বাংলাদেশ পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে অভিজিৎকে যারা যারা হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, সেই রকম ১০ জনের একটি তালিকা ধরে তাদের গ্রেপ্তারের পরিকল্পনাও চলছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম রোববার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ওরা (এফবিআই) তো কথা কম বলে। তারপরও জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা কী মনে কর, কারা এই হত্যায় জড়িত?
তারা বললো, এটা যদিও টওথমে বলা কঠিন, তারপরও প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটা কোনো এক্সট্রিমিস্ট গ্রুপের কাজ।যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক-ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড তদন্তে যোগ দিয়ে এফবিআই কর্মকর্তারা গত শুক্রবার হত্যাকাণ্ডস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তারা অভিজিতের বাবা অজয় রায়ের কথাও শনিবার শুনেছেন।বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এফবিআই কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই নাগরিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশকে সহায়তা করছে।মনিরুলও বলেন, এফবিআইয়ের সরাসরি অপারেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তারা এই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।এখনও তারা কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে হবে, এমন কোনো তথ্য দেননি। যদি কাউকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তারা রিকম্যান্ড করে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
মুক্তমনা ব্লগসাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ফারাবী শফিউর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইন্টারনেটে উগ্রবাদের প্রচারক ফারাবী লেখালেখির জন্য অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। ফারাবী ছাড়া আর কারা এভাবে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল বা ফেইসবুকে কমেন্ট করে হত্যায় উৎসাহিত করতে চেয়েছিল তাদের গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল জানান।১০ জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা আছে।রিমান্ডে থাকা ফারাবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও অভিজিৎকে হুমকিদাতা কিছু লোকের নাম জানিয়েছেন বলে মনিরুল জানান।অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করে আনসার বাংলা ৭ নামের একটি গ্র“প টুইট করেছিল। সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ।মনিরুল দাবি করেন, এই হত্যারহস্যভেদে তাদের তদন্তের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এফবিআই কর্মকর্তারা।তিনি আরও বলেন, অভিজিৎ রায় যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ভবিষ্যতে এফবিআই চাইলে তাদের নিজ দেশেও এই ঘটনায় মামলা করতে পারে। তারা তখন যদি আমাদের সহায়তা চায়, আমরা করব।তাছাড়া এখন হত্যার কোনো আলামত তারা যদি বিদেশে নিয়ে পরীক্ষা করতে চায়, সেই সুযোগও রয়েছে।সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই হত্যাকাণ্ডে দুজন গ্রেপ্তারেরযে তথ্য জানিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে মনিরুল বলেন, আরেকজনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছিল। হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য প্রমাণ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।