ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে এক বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ভ্লাদিমির পুতিনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে গিয়ে তারা ওই বৈঠক করেছেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
রোম ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, চলতি সপ্তাহে কিয়েভে মস্কোর হামলার পর তার মনে হচ্ছিলো যে পুতিন তাকেও ঘোরাচ্ছেন। না হলে বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কোনো কারণ ছিলো না।
ট্রাম্প ও জেলেনস্কিকে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরুর আগে গভীর আলোচনায় মগ্ন দেখা গেছে। হোয়াইট হাউজ ১৫ মিনিটের ওই বৈঠককে খুবই ফলপ্রসূ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ঐতিহাসিক হবার মতো।
ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর এটাই ট্রাম্প ও জেলেনস্কির প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।
ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক বার্তায় বলেন, ‘ইউক্রেনের শহরগুলোতে রাশিয়ার আক্রমণ আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে যে হয়তো তিনি যুদ্ধ থামাতে চান না, তিনি কেবলই আমাকে ঘোরাচ্ছেন। এটি ব্যাংকিং বা সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ভিন্নভাবে মোকাবেলা করতে হবে?’
শুক্রবার মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন চুক্তির খুবই কাছাকাছি পৌঁছেছে।
ক্রেমলিনও শনিবার বলেছে, ইউক্রেনের সাথে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসার বিষয়টি উইটকফকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে, হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘আপনার হাতে কোনো কার্ড নেই’ এবং তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবেন না।
ট্রাম্প যুদ্ধ শুরুর জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করেন এবং অনেকবারই শান্তি আলোচনায় বাধা হওয়ার জন্য জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করেন। তবে শনিবারের বৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউজের দিক থেকে ইতিবাচক সুর পাওয়া গেছে।
এদিকে জেলেনস্কিও বলেছেন, ‘যৌথভাবে ফল পাওয়া গেলে এই বৈঠকের ঐতিহাসিক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহাও সামাজিক মাধ্যম এক্সে ছবি পোস্ট করেছেন এবং ক্যাপশন লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক এ বৈঠকের গুরুত্ব বর্ণনায় কোনো শব্দের প্রয়োজন নেই। দুই নেতা সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় শান্তির জন্য কাজ করছেন।’
ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের পোস্ট করা আরেক ছবিতে দেখা গেছে, দুই নেতার সাথে দাঁড়িয়ে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এতে মনে হচ্ছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট দুই নেতাকে কাছে আনতে সহায়তা করেছেন।
বৈঠকের পর ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ব্যাসিলিকায় অন্ত্যেষ্টিকিয়া অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে তাদের নির্ধারিত জায়গায় আসন গ্রহণ করেন। জেলেনস্কি যখন আসেন তখন অনেকেই হাততালি দেন। অনুষ্ঠানের সময় তারা পরস্পরের অল্প দূরত্বেই অবস্থান করেন। এ সময় ফরাসি প্রেসিডেন্টসহ অন্যরাও ছিলেন।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেন, কিন্তু অনুষ্ঠানের পরপরই দ্রুত সময়ের মধ্যে রোম ছেড়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জেলেনস্কি পরে ফরাসি দূতাবাসে গিয়ে ম্যাক্রোঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বাসায় তার সাক্ষাৎ হয় কিয়ের স্টারমারের সাথে। এছাড়া আলাদা করে আলোচনা করেন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনের সাথে।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেয়া বার্তায় ম্যাক্রোঁ লিখেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান একটি লক্ষ্য, যা আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে শেয়ার করেছি।’ তিনি লিখেছেন, ইউক্রেন নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত।
ওদিকে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য যেসব ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে তা নিয়ে স্টারমার ও জেলেনস্কি আলোচনা করেছেন এবং তারা সুযোগ পেলেই আবারো কথা বলবেন।
এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের সময় ট্রাম্প ওয়াশিংটনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ না করায় জেলেনস্কির বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগ করেছিলেন।
পরে ট্রাম্পের ক্রমাগত চাপের মুখে কিয়েভ যুদ্ধ অবসানে মস্কোর সাথে ভূখণ্ড ছাড় দিয়েও সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয়টি গ্রহণ করে। এই ছাড় দেয়ার মধ্যে একটি বড় অংশের ভূমি এবং ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করে নেয়া ক্রিমিয়ার বিষয়টিও রয়েছে।
জেলেনস্কি এর আগে এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। তিনি শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি সবকিছু নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।