00000

দৈনিকবার্তা-মংলা (বাগেরহাট), ১৩ ডিসেম্বর: ছড়িয়ে যাওয়া কালো তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান৷ দেশের ও বিশ্ব গণমাধ্যমে যখন সুন্দরবনের প্রাণী ও উদ্ভিদের ব্যাপক ক্ষতির সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে, প্রতিবেশী ভারত ও জাতিসংঘ যখন বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই মুহূর্তেই শনিবার দুপুর একটায় সুন্দরবনের শ্যালা নদীর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এ ধরনের কথা বললেন৷

একইসঙ্গে তেল ছড়িয়ে পড়া রোধে শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে মংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ বক্তব্যে তিনি সুন্দরবনের চেয়ে বন্দর ব্যবহারকারীদের স্বার্থের কথাই বেশি বলেন৷

শাজাহান খান বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে সুন্দরবনের শ্যালা নদী ও খালের ভাসমান তেল সংগ্রহের পর রাসায়নিক তরল পদার্থ ব্যবহার করা হবে৷ কালো তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি৷ নৌমন্ত্রী বলেন, রাসায়নিক তরল পদার্থ অপসারণে বিদেশি একটি কোম্পানি সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানান৷

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে শ্যালা নদীতে যান চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মংলা বন্দরে৷ কার্গো, কোস্টার সঙ্কটে বন্দরের পণ্যবোঝই ও খালাস ব্যাহত হচ্ছে৷ মংলার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে৷ শেলা নদীর শরণখোলা এলাকায় আটকে পড়েছে পণ্যবাহী নৌযান৷ এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে বন্দর ব্যবহারকারীরা৷

তিনি আরও বলেন, মংলা বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চল সচল রাখতে আগামীকাল রোববার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ সেখানেই শর্ত সাপেক্ষে নৌ-চলাচলের অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে৷এছাড়া দুই জাহাজ মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি৷

এদিকে,বাংলাদেশের সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে লন্ডন ভিত্তিক একটি বিশেষজ্ঞ দল সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে৷ বাংলাদেশ সরকারের নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, রোববারের মধ্যে এই দল ঢাকায় এসে পৌঁছবে৷ এরপর সরকারের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে৷ সেখানে সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেলের আস্তরণ কীভাবে সরানো যায়, তারা সে বিষয়ে পরামর্শ এবং প্রস্তাব দেবে৷

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভোরে শ্যালা নদীর মৃগামারী (মংলা) এলাকায় তলা ফেটে একটি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়৷ সেখান থেকে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়ে৷ এতে বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়ে৷ সুন্দরবনের শ্যালা নদীসহ আশপাশের বিস্তৃীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন কালো তেলের আস্তরণ৷ সুন্দরবনকে বাঁচাতে ভাসমান এসব তেল অপসারণের কাজ চলছে৷

শনিবার ভোর থেকে অর্ধশতাধিক ট্রলার ও নৌকা যোগে স্থানীয়দের নিয়ে বন ও পরিবেশ বিভাগ ও মংলা বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তেল অপসারণের কাজ করে যাচ্ছে৷ এ পর্যন্ত অপসারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার দুইশ লিটার তেল৷ এর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুরা নেট জাল এবং ফোম দিয়ে তেল সংগ্রহের এ প্রতিযোগিতায় নামে৷

তবে নদীর পানি থেকে তেল অপসারণের জন্য রাসায়নিক পদার্থ ছিটানোর কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের তেল ছড়িয়ে পড়ায় চারদিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, সেখানে রাসায়নিক দ্রব্য ছিটানো হলে আরও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে কি না সেটা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ যদিও সাধারণ মানুষের মাধ্যমে নদী থেকে তেল সংগ্রহের অভিযান অব্যাহত থাকবে৷