অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৮অক্টোবর : আমেরিকায় সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হলে সেসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷ রেল ও সড়ক ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে হলে এগুলোর জরুরি সংস্কার প্রয়োজন৷ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে না পারলে আমরা কখনোই ট্রানজিট দিতে পারব না৷

স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে সিলেটবাসীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন৷অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের নাজুক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ৷ এ কারণে সরকার সারা দেশে মহাসড়ক না বাড়িয়ে সংস্কার ও উন্নয়নের দিকে জোর দিচ্ছে৷ যেখানে দুই লেন সড়ক আছে সেখানে প্রয়োজনে চার লেন করা হবে৷

মুহিত বলেন, বিভিন্ন জেলার সঙ্গে কেন্দ্রের যোগাযোগ ভালো৷ কিন্তু সরকারের এ সিদ্ধন্ত নিতে প্রায় পাঁচ বছর লেগেছে৷ রেলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ ও পরিবেশবান্ধব৷ এ কারণে বর্তমান সরকার রেলওয়ের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ ইতিপূর্বে রেলে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে রেল পরিচালনা করা যায়৷ এ কারণে সরকার সারা দেশে নতুন কোনো রেললাইনও তৈরি করবে না৷ কিন্তু যেখানে কাজ হবে সেখানেই রেললাইন ডুয়েল গেজ করা হবে৷ যাতে যেকোনো জায়গায় যেকোনো ধরনের ট্রেন চলতে পারে৷

মতবিনিময় সভায় প্রবাসীরা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুর দাবি পুনবর্্যক্ত করলে অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের কোনো উড়োজাহাজকে আমেরিকায় আসতে দেয়া হয় না৷ কারণ আমাদের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল৷ এটার নিশ্চয়তা না দেয়া পর্যন্ত আমেরিকায় উড়োজাহাজ আসবে না বাংলাদেশের৷ এখানে অন্য আর কোনো কারণ নেই

তিনি বলেন, আমাদের উড়োজাহাজের বহর বা ক্যাপাসিটি আছে৷ কিন্তু নিরাপত্তা সক্ষমতা না বাড়ানো পর্যন্ত আমেরিকায় আমাদের উড়োজাহাজ নিয়ে আসা সম্ভবপর হবে না৷ এটা আমাদের একটা দুর্বলতা৷

মুহিত বলেন, আমাদের সিভিল এভিয়েশন নট ইন এ গুড শেপ৷ আমাদের সিভিল এভিয়েশন আমাদের বিমান বাহিনী পরিচালনা করেন৷ কিন্তু বিমান বাহিনী ব্যবসা জানেন না বা এই ব্যবসা তাদের জন্য যথোপযুক্ত নয়৷ এখানে পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত সিভিল এভিয়েশনের উন্নতি খুব একটা হবে না৷

সিলেট ওসমানী বিমাবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সিলেট বিমানবন্দরটি সব দিক থেকে উপযুক্ত৷ কিন্তু রিফুয়েলিং সিস্টেম না থাকায় এখান থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না৷

তিনি বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরেও ট্রানজিট কান্ট্রি হতে পারেনি বাংলাদেশ৷ ২০১০ সালে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ট্রানজিট কান্ট্রি করতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় স্বার্থে বিএনপি তা গ্রহণ করেছে৷ কিন্তু চীন, বার্মা ও ভারত অনেক দিন ধরে উত্‍সুক হয়ে থাকলেও বাংলাদেশেরই ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার সামর্থ নেই৷

মুহিত বলেন, ট্রানজিট কান্ট্রি হিসাবে প্রয়োজনীয় সড়ক, রেল ও নদীপথ নেই বাংলাদেশের৷ এজন্য সবার আগে প্রয়োজন এসবের উন্নয়ন৷ আর এসব খাতের উন্নয়নে প্রবাসীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আমেরিকা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড, সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ,এম এ সালাম, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আব্দুল বাসিত, এম এ কাইয়ুম, আবুল কালাম, তোফায়েল চৌধুরী, তোফাজ্জল করিম, এমাদ চৌধুরী, নাসির উদ্দিন, আব্দুর রহিম বাদশা, আজিমুর রহমান বোরহান, মঈনুল হক চৌধুরী, বুরহান উদ্দিন কফিল, মিসবাহ আহমেদ, এম এ মুহিত, ময়েজ উযদ্দিন মতিন, নূরুল ইসলাম বতা, সাবি্বর আহমদ প্রমুখ৷মতবিনিময় সভার সঞ্চালক ছিলেন আতাউল গণি আসাদ৷