গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যকীয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।
তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, হয়রানি ও মিথ্যা মামলার প্রেক্ষাপটে তাৎক্ষণিক সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই একটি আইনি সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলার জোর দাবি জানান।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ইউনেস্কো গ্লোবাল মিডিয়া ডিফেন্স ফান্ডের (জিএমডিএফ) সহায়তায় ‘সমষ্টি’ আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে কাদের গণি চৌধুরী এ দাবি জানান।
সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাংবাদিকদের জন্য একটি কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক আইনি সহায়তা ব্যবস্থা তৈরি করা।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন কর্মপরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। বিগত সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালিয়েছে এবং কালো আইন তৈরি করে হয়রানি করেছে। অথচ তাদের সুরক্ষার জন্য কোনো কার্যকর কাঠামো গড়ে তোলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর গণমাধ্যমে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সাধিত হলেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতার অভাব দেখা গেছে। বর্তমানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩২টি আইন ব্যবহার করে মামলা ও হয়রানি করা হয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম সংলাপে উল্লেখ করেন, গত ১৫ বছরে ৬৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তবে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি। এমনকি বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যার বিচারও ঝুলে আছে।
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকরা রাজনৈতিক চাপ, মালিকপক্ষের প্রভাব, প্রশাসনিক জটিলতা ও কালো টাকার আধিপত্যের কারণে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো কার্যকর আইনি সহায়তা কাঠামো বিদ্যমান নেই।
সংলাপে জানানো হয়, সাংবাদিকদের সুরক্ষার লক্ষ্যে ‘সমষ্টি’ ইউনেস্কো জিএমডিএফের সহায়তায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হলো সাংবাদিকদের জন্য একটি স্থায়ী আইনি সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলা। এই উদ্যোগের অধীনে সাংবাদিক সংগঠন এবং আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা হচ্ছে।
সভায় বক্তারা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিকারমূলক পদক্ষেপের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও কাঠামোগত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এজন্য একটি কার্যকর আইনি সহায়তা তহবিল, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা তারা উল্লেখ করেন।