৬০ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর মামলা কেন প্রত্যাহার হচ্ছে না প্রশ্ন রেখে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা শুনেছি প্রধান উপদেষ্টার সব মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেছে। উনিও শেখ হাসিনার ঈর্ষা, বিদ্বেষ এবং আক্রোশের শিকার হয়েছেন। আমরাও আন্দোলন সংগ্রামে থেকেছি নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি। দু’ একজন উপদেষ্টারাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাদের মামলা যদি প্রত্যাহার হয়ে থাকে তাহলে লাখ লাখ মানু্‌ষেরটা কেন হচ্ছে না? আমাদের ৬০ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর মামলা কেন প্রত্যাহার হচ্ছে না? অতি শিগগিরই এসব মামলা নিষ্পত্তির আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি, মুক্তি কতদূর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা মাদক সম্রাজ্ঞীদের এমপি বানাতেন, গড ফাদার ও মাদক কারবারিই ছিলেন হাসিনার কাছে বেশি সম্মানিত। আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী এস আলম, সালমান এফ রহমানসহ যারা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ তাদের টাকা পাচারের গল্প সিন্দাবাদের গল্পকে হার মানিয়ে নতুন রূপকথার গল্প বাংলাদেশের মানুষ শুনেছে। গল্পটি রূপকথার মতো হলেও এটি অত্যন্ত সত্য ও বাস্তব ঘটনা।’

যেখানে আমেরিকানরা ফ্লাট কিনতে সাহস পায় না সেখানে শেখ হাসিনার এমপি মন্ত্রীরা ফ্ল্যাট কিনেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ পরিবারের টিউলিপ সিদ্দিকও এখান থেকে মুক্ত নয়, তিনি আবার লন্ডনের এমপি ছিলেন। শেখ হাসিনা তো নিজেই গর্ব করে বলতেন, তার পিয়ন নাকি বাড়িতে হেলিকপ্টার ছাড়া যায় না, তিনি নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। তার ঘনিষ্ঠ এস আলম তার বাড়ির কাজের লোক দিয়ে একটি ব্যাংকের শাখা থেকে দু’ হাজারের কোটির বেশি টাকা লোন তুলেছেন। শেখ হাসিনা দেশ থেকে জনগণের টাকা লুট করে পুঞ্জীভূত করে পাচার করেছেন। কিছু টাকা দেশে আছে, যেটি বিভিন্ন অপকর্ম করতে ব্যবহার হচ্ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা করতে গিয়ে যে প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল আন্দোলনের সেই ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি ব্যবহারের কারণে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের গ্রামের বাড়ি আগুনে ভস্মীভূত করে দেয়া হয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদ তার অধঃপতনের পরেও পাচার করা টাকার যে জোরে তারা যেমন হুমকি দিচ্ছে তেমনি নানাবিধ কাজ করে বেড়াচ্ছে। সেই শেখ হাসিনা এই যে ৬০ লাখ বিএনপি নেতাকর্মী নামে যে মামলা দিয়েছে, সে মামলা তো দেয়ারই কথা, কারণ তার লোককে বেসিক ব্যাংক দিতে হবে, তার লোককে অগ্রনী ব্যাংক দিতে হবে, তার লোককে ফার্মার্স ব্যাংক দিতে হবে এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে টাকা লুটে নেবে। এ জন্য মিছিল হতে পারে, প্রতিবাদ হতে পারে এরকম নানা ধরনের কর্মসূচি হতে পারে। অতএব নানা কায়দায় যদি গুম করে হচ্ছে না, অদৃশ্য করে হচ্ছে না, বিচারবহির্ভূত হত্যা করেও হচ্ছে না তাই মামলা দিয়ে মানসিকভাবে দুর্বল করে আমি আমার ফ্যাসিবাদের লেলিহান অগ্নিশিখা আমি জ্বালিয়ে রাখব। যেখানে কেউ কিছু যেন বলতে না পারে, কিছু সাহস যেন কেউ করতে না পারে, তার জন্যই ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এটা জুলুমের এক ভয়ঙ্কর বহিঃপ্রকাশ।’

রিজভী বলেন, ‘আমার এখন কথা হচ্ছে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে চলে গেছে। মোটামুটিভাবে আট মাস হয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের। আমরা সমালোচনা করি আবার সমর্থনও করছি। যেই সরকারের অধীনে সবকিছু ঠিকঠাক চলবে। একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শেখ হাসিনা আত্মসাৎ করে এটা অদৃশ্য করার চেষ্টা করেছেন সেটাকে পুরোপুরিভাবে প্রবর্তন করবেন ড. ইউনুস এটাই জনগণের প্রত্যাশা, এটাই জনগণ কাম্য করে সেজন্যই আমাদের কথা বলা।’

‘কেন দ্বিধা-দ্বন্দের মধ্যে দোলাচ্ছেন মানুষের হৃদয়কে। পেন্ডুলামের মধ্যে ডিসেম্বর না জুন এর মধ্যে দোল খাচ্ছে কেন। এটা সুস্পষ্ট করুন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ৬০ লাখ মামলা প্রত্যাহার হয়েছে কিনা জানি না। প্রায়ই উকিল খবর দেয় কালকে কিন্তু আসবেন আজকে একটি মামলা উঠতে পারে। আমাদেরকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কোর্টের বারান্দায় লেফ রাইট করতে হয়েছে। নির্মমভাবে এজলাসে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যে ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের ছোট ভাইয়ের চাইতে ছোট ভাই তার কি নির্মম নিষ্টুরতা। আমরা যদি বেঞ্চে বসতাম সে আমাদেরকে ধমক দিয়ে বলতো যে কাঠগড়ায় বসো। আমরা কেউ মার্ডার, সামাজিক অপরাধ করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াইনি। ব্রিটিশ আমলেও আমরা দেখেছি রাজনীতিবিদদের একটা সম্মান দিতে। সেই সম্মানটুকুও শেখ হাসিনার আদালতের বিচারকরা করেনি। আমাদেরকে জোর করে, জবরদস্তি করে পুলিশ দিয়ে ধরে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে যত ধরনের অপমান, লাঞ্চনা করেছে শুধুমাত্র তার লুটপাট, অনৈতিকতা এবং দেশের গণতন্ত্রকে গ্রাস করে নিয়ে আজীবন মহারানী হয়ে থাকার তার যে আকাঙ্ক্ষা সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার জন্য এই আদালতকে দিয়ে কাজ করিয়েছে শেখ হাসিনা।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ থাকার কথা ছিল, তাতে তারা ভালো করতো। কিন্তু ক্ষমতার অংশীজন হয়ে আরো সতর্ক থাকার কথা ছিল কিন্তু কেন উপদেষ্টার পিএ ও এপিএস-এর নামে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এটা তো ভয়ঙ্কর কথা! এতে তো শেখ হাসিনা তিনবার ডিগবাজি দিবে, বলবে ‘আমাকে বলেছিলে, এখন দেখো’।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্ররা কেন মিনিস্ট্রিতে গিয়ে পার্লামেন্টারিয়ান মতো কমিটি দেয়া হচ্ছে, কেন? এতে তো ছাত্রদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। রেলের সাবেক ডিজি বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রেলে টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িত’। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় হাতে দমন করা দরকার ছিল। এটা হয় না। এটা তো ঠিক, যে ছেলে পাশ করে চাকরির সন্ধান করার কথা ছিল, সে যদি এত টাকা দেখে তার তো মাথা ঠিক থাকার কথা না, উৎকর্ষ মাধ্যমে তাদের বিকশিত হওয়ার কথা ছিল সেটি হচ্ছে না। সমাজের কিছু দুষ্কৃতিকারী তাদের টাকার লোভ দেখিয়ে, তাদের যে চেতনা সেটি স্পিরিট ধ্বংস করা চেষ্টা করেছে। এর কিছু আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ।

সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন প্রমুখ।

সঞ্চালনায় ছিলেন ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।