কাশ্মিরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের মাঝে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলো সৌদি ও ইরান
ডনের এক প্রতিবেদনে বেলা হয়েছে, কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। উভয় দেশই দুই প্রতিবেশীকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সংঘটিত হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। বিশ্লেষকরা একে ২০০০ সালের পর ভারত-অধিকৃত হিমালয় অঞ্চলে সবচেয়ে মারাত্মক সশস্ত্র হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ভারত হামলাকারীদের সীমান্ত পারস্পরিক সংযোগের ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে যেকোনো ধরনের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দুই দেশের মধ্যে আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, যা ২০১৯ সালের বালাকোট সঙ্কটের স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং সম্ভাব্য সামরিক সঙ্ঘর্ষের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
উত্তেজনার এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও ইরান, যাদের উভয় দেশের সাথেই ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত করতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে পৃথকভাবে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ফারহানের সাথে দার আঞ্চলিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন, ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘আরো উত্তেজনাকর পদক্ষেপ’ না নেয়ার জন্য সতর্ক করেন। একইসাথে, তিনি যেকোনো আগ্রাসনের দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানাতে পাকিস্তানের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন। দুই নেতা পরামর্শ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও একমত হন।
অন্যদিকে, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক্স-এ (সাবেক টুইটার) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানান, তিনি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে পেহেলগাম হামলা এবং এর ‘সীমান্তের আন্তঃসম্পর্ক’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক্স-এর মাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান ইরানের ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী। তাদের মাঝে রয়েছে প্রাচীন সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার বন্ধন।’ তিনি জানান, তেহরান ‘এই কঠিন সময়ে বৃহত্তর বোঝাপড়া তৈরির জন্য ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লিতে তার ভালো অবস্থান ব্যবহার করতে প্রস্তুত।’
আরাঘচির ফোনালাপের পর গভীর রাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার ইরানের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন এবং উত্তেজনা প্রশমনে তাদের সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
এর আগে, শুক্রবার তার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান বলেন, যদি কোনো দেশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়, তাহলে পাকিস্তান ‘সেই সময়’ তা বিবেচনা করবে।
কাশ্মিরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর এমন টানাপোড়েন গোটা অঞ্চলের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের মতো প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যস্থতার উদ্যোগ উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র : ডন