ভারত একজন ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে জায়গা দিয়ে নিজেদেরও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

তিনি বলেছেন, ভারতকে আমরা বন্ধুরাষ্ট্র মনে করি। কিন্তু ভারত কি বাংলাদেশকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করে? ভারত যা করছে, তাতে ভারত যে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র সেটি বলা খুব কঠিন। বাংলাদেশের লুটেরা, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে জায়গা দিয়েছে। এতে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করতে পারে না। ভারত একজন ফ্যাসিস্টকে জায়গা দিয়ে নিজেদেরকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ভারতে মুসলিম নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টকে রুখে দিয়েছি। আমাদের দেশে তার (শেখ হাসিনা) জায়গা হয়নি। তাকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি। তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য শুধু ভারতে পালাননি, তার আসল ঠিকানাই হচ্ছে ভারত। আমরা তো হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকেও পরাজিত করেছিলাম। কিন্তু তিনি ভারতে যাননি। তিনি জেলখানায় গিয়েছিলেন। ভারত বলছে, শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য তারা জায়গা দিয়েছে। মূলত রক্ষা নয়, শেখ হাসিনার আদর্শ হচ্ছে ভারত এবং তার ঠিকানাও ভারত। সেজন্য তিনি ভারতে গিয়েছেন। তাকে জায়গা দিয়ে ভারত নিজেদেরকে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি কখনো দাবি করতে পারে না। একজন ফ্যাসিস্ট শুধু ফ্যাসিস্টের সাথেই থাকতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারত আমাদের নানাভাবে উস্কানি দিচ্ছে। ভারত এদেশে গণতন্ত্রবিনাশি শক্তিকে শুধু রাখেনি, এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছে। ভারত শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে তিনটা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিল বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনী ব্যবস্থা নেই। সে (শেখ হাসিনা) নির্বাচনের নামে জালিয়াতি করেছে। সে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস এবং গণতন্ত্র ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সকল অর্থে ভারতের ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল। হয়তো আরেকটু সময় পেলে বাংলাদেশকেও ভারতের সাথে যুক্ত করে ফেলতো!

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য নানান ভাবে, নানান ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেজন্য আমি বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাদের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে, এই দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। যেটা বিএনপি বার বার আপনাদের বলেছে। সেই উদ্যোগ না নিলে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হবে। আর জনগণ ঐক্যবদ্ধ না থাকলে, ভারতের জন্য সুবিধা হবে। সেজন্যে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মানুষের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার ক্ষমতা দিতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যা শুধু দেশকে রক্ষা করতে পারবে এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারবে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমি দেশ, দল এবং নিজের পক্ষ থেকে ভারতের অগণতান্ত্রিক পৈশাচিক ভূমিকার প্রতিবাদ জানাই। ভারত সম্প্রতি নিজেদের সারাবিশ্বে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরেছে। এতটাই নির্মম রাষ্ট্র শুধু মুসলমানদের হত্যা করছে তা নয়, সেই দেশের নিম্নমানের হিন্দু এবং নানা জাতি-উপজাতির ওপরে তার আক্রমণ করছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় ৫০ হাজারের বেশি নারী, পুরুষ এবং শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। ইসরাইলের হত্যাকাণ্ডের সাথে, ইসরাইলের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতেও যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তখন ভারত আমাদের জায়গা দিয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছে। সেজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আছি। কিন্তু সেই দেশ যখন নির্বিচারে নারী পুরুষ এবং মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তখন এটি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।