জামিনে মুক্ত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত নেতা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। ৩৩ মামলায় ধাপে ধাপে জামিন পেয়ে রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান নেতাকর্মীরা। কারামুক্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন জাকির খান।

এর আগে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১১-এর একটি অভিযানে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জাকির খান।

নারায়ণগঞ্জে মোট ৩৩টি মামলার আসামি ছিলেন জাকির খান। গ্রেফতার হওয়ার পর ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় জামিন পান তিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ী সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি এবং মামলার অন্য আসামিরা খালাস পান।

নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে আসা জাকির হোসেন ওরফে জাকির খান একসময় শহরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন।

২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর মাসদাইর এলাকায় নিজের বাড়ির অদূরে সাব্বির আলম খন্দকারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি সাব্বির বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা (বহিষ্কৃত) ও বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ছোটভাই।

সাব্বির আলম খন্দকার হত্যার পর আসামি হিসেবে নাম এলে আত্মগোপনে চলে যান জাকির খান।

সাব্বির হত্যা মামলার পর জাকির থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। পলাতক থাকা অবস্থাতেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় আদালত সাজা দেয়। এরপর থেকে তিনি আর দেশে ফেরেননি। এক বছর আগে ভারত হয়ে দেশে ফিরে আসেন বলে জানা গেছে।

জাকির খানের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় তার ১৭ বছরের সাজা হয়। পরে উচ্চ আদালতে তার সাজা কমে আট বছর হলেও তিনি গ্রেফতার এড়াতে দেশে ও বিদেশে প্রায় দুই দশক পলাতক ছিলেন।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে জাতীয় পার্টির মরহুম সংসদ সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানের হাত ধরে জাকির জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দেন। ওই নেতার সাথে বিরোধের জেরে ১৯৯৪ সালে তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন। তখন শহরের ডিআইটিতে তাকে সংবর্ধনাও দেয়া হয়। বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কয়েক দফা জেলও খাটেন তিনি। দেশে না থাকলেও অনুসারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল জাকির খানের।

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাকির খান। ফলে শামিমের পুরো ক্ষমতা থাকাকালে জাকির খানকে বেছে নিতে হয়েছিল ফেরারি জীবন।