পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার পর টাকার সাথে প্রতিবারই নানা ধরনের চিঠি ও চিরকুট পাওয়া যায়। এসব চিঠিতে সাধারণত মনের মানুষকে পাওয়ার আকুতি, রোগবালাই, ঝগড়াকলহ থেকে মুক্তির আকুতি এবং নানা ধরনের প্রার্থনা থাকে। এবারো এরকম অনেক চিঠি-চিরকুট পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে কয়েকটি চিরকুট সাংবাদিকদের চোখে পড়ে। পরে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। একটি চিরকুটে লেখা ‘পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়’। বোঝাই যাচ্ছে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে স্যাটায়ার করে লেখা হয়েছে এ চিরকুটটি। আরেকটি চিরকুট খুব আকুতি করে লেখা। ওই চিরকুটে লেখা হয়েছে- ‘ড. ইউনূস স্যারকে আরো ৫ বছর চাই। সাধারণ জনগণ। আল্লাহ তুমি সহজ করে দাও।’
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দনবাক্স খোলা হয়। ১১টি দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা। আরো পাওয়া গেছে বিদেশী মুদ্রাসহ সোনা, রুপা ও হীরার বিপুল পরিমাণ অলঙ্কার। সেইসাথে চিঠি-চিরকুট। অলঙ্কারের পরিমাণ পাঁচ কেজি হবে বলে ধারণা দেন প্রশাসনের লোকজন।
টাকা গণনার কাজ চলছে। গণনা শেষ হতে রাত ১১টা বেজে যেতে পারে।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তারের তত্ত্বাবধানে দান বাক্সগুলো সকালে খোলা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
সকাল ৯টায় দিকে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকা রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়। বিভিন্ন দান অনুদান দেয়ার পর মসজিদের ব্যাংকের হিসাবে এখন পর্যন্ত ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা জমা আছে।
এসব টাকা দিয়ে মসজিদের জায়গা সম্প্রসারণ করা হবে। বর্তমানে মসজিদের যতটুকু জায়গা আছে ততটুকু জায়গার নামজারি করা হয়েছে। জায়গা সম্প্রসারণের পরে সেখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামিক কমপ্লেক্স স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। এই কারণে তারা টাকা-পয়সা অলঙ্কারাদি নিয়ে ছুটে আসে এই মসজিদে। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকজনও এ মসজিদে দান করে থাকে।
সাধারণত তিন মাস পর পর মসজিদের দান বাক্সগুলো খোলা হয়। এবার চার মাস ১২ দিন পর খোলা হয়েছে পাগলা মসজিদের দানবাক্স।
এর আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর মসজিদটির নয়টি দানবাক্স খুলে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সে সময় গণনা শেষে টাকার পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪।
বস্তার হিসেবে গতবারের চেয়ে এবার এক বস্তা টাকা কম পাওয়া গেছে। তবে কমিটির লোকজন ধারণা করছেন এবারো টাকার পরিমাণ আট কোটি ছাড়িয়ে যাবে।