কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) থেকে:
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মোখলেছুর রহমান অরুন। তিনি উপজেলার ময়না ইউনিয়নের অবস্থিত ‘ময়না এ সি বোস ইনস্টিটিউশন’-এর প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা কৃষকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মৃধা আবুল হাশেম সিদ্দিকী, সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাদত হুসাইন, শিক্ষক রোকশানাসহ ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী ৩১টি অভিযোগ এনে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অর্থ আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মসহ মোট ৩১ টি খাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন ওই শিক্ষক।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান অরুন জেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল থেকে দেওয়া ১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিদ্যালয়ের পুরাতন বেঞ্চে ‘জেলা পরিষদ’ লিখে এ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া আর্থিক অনিয়মের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানাগারে অনুদানপ্রাপ্ত ৯৫ হাজার টাকা। দাতা সদস্য মুজিবর আমিন প্রদত্ত ২ লাখ টাকা এবং বিদ্যালয়ের গাছ ও ঘর বিক্রির ৮ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদ্যালয়ের অংশের বেতন তিন বছর দেন না তিনি, বেতন চাইলে বরখাস্ত করার হুমকি ধামকি দিয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের দমিয়ে রাখা হয়। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতের আয়ের টাকা থেকে আংশিক ব্যাংকে জমা দিয়ে বাকিটা তিনি আত্মসাৎ করেন। এই প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের ফিরিস্তি এখানেই শেষ নয়। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর NTRCA এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত বিপিএড শিক্ষকের এমপিওভূক্তির জন্য মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করেন তিনি, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় তার এমপিও ফাইল সাবমিট না করে আটকে রেখেছেন। দিনের পর দিন ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত থাকা ও বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত না হয়েও খাতা কলমে শতভাগ উপস্থিত দেখিয়ে আসছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন উপজেলা কৃষক লীগ নেতা হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে বিদ্যালয় চলাকালীন ক্লাস বন্ধ রেখে বিদ্যালয় অঙ্গনে কৃষক লীগের সভা-সমাবেশ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ও সেসব সভা-সমাবেশে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে বাধ্য করতেন। এমন কী এসব সভা সমাবেশে আগত নেতা কর্মীদের আপ্যায়ন করিয়ে তা বিদ্যালয়ের খরচ খাত থেকে টাকা তুলে নিতেন।
প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান অরুণ গত বছর ৫ আগস্ট বোয়ালমারীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের পক্ষে সরাসরি অস্ত্র হাতে মিছিলে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী শিক্ষকগণ বলেন, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হলেই প্রধান শিক্ষকের সকল দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সকল চিত্র উঠে আসবে।
এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান অরুণ বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। সব ডকুমেন্ট আছে আমার কাছে। আমি সরাসরি কথা বলবো এগুলো নিয়ে। ওরা কেন (অভিযোগ) দিছে, কি জন্য কি হইছে এগুলো না বললে তো বুঝতে পারবেন না।’ এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘স্কুল কে চালায়? কমিটি না-কি প্রধান শিক্ষক একা চালায়? আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে। একজনের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে কত কিছু (অভিযোগ) বানায় দিতে পারে।’
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয় বরাবর ময়না স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে শিক্ষক কর্মচারীগণ, স্যারের সাথে কথা হয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তিনি (প্রধান শিক্ষক) নিয়মবহির্ভূত কোন কাজ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, একটি তদন্ত কমিটি করে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’