বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম। বয়স প্রায় ৯০ বছর। কথা বলতে পারেন না। বয়সের ভারে অচল প্রায় বৃদ্ধা চলাফেরাও করতে পারে না। তার আট ছেলে-মেয়ে। কেউ সরকারি চাকরি করেন, কেউ আবার কৃষি কাজ করেন। স্বামীর প্রায় ৪০ বিঘা জমি। ৮ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ার নিয়ে ছেলে-মেয়ের মাঝে বাধে বিরোধ। কেউ মায়ের ভরোণ পোষনের দায়িত্ব নিতে চায় না। তাইতো সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধা মাকে খোলা আকাশের নিচে ফেলে গেল তার ছেলে-মেয়েরা। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরা ইউপির জগতনগড় গ্রামে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৭টায় উপজেলার মথুরাপুর ইউপির জগতনগড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় জানাজানি হলে সন্ধ্যার পর বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে এক নজর দেখতে গ্রামবাসি হাজির হন। তবে, গ্রামবাসীসহ প্রশাসনের চাপে পরে সন্তানরা ওই বৃদ্ধাকে বাড়িতে নিয়ে গেছে। সংবাদ পেয়ে জগতনগড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম খোলা আকাশের নিচে একটি বালিশের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন। কথা বলার চেষ্টা করলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছু বলতে পারে না।
বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে রাতে মশার হাত রক্ষার জন্য গ্রামবাসি মোশারী টাঙিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার কয়েল জ্বালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন কেউ এক নজর দেখতেও আসে নি। ছেলেদের সাথে কথা বলার জন্য গেলে সংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দেয়। তবে ঘটনার এক ঘন্টা পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে মশিউর নামের এক ছেলে তার মা সুফিয়া বেগমকে খোলা মাঠ থেকে নিয়ে তার বাড়িতে জায়গা দেন। গ্রামবাসিরা বলেন, ‘তার স্বামীর প্রায় ৪০ বিঘা জমি ছেলেরা আগেই তার বাবার কাছে থেকে লিখে নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম তার পাঁচ মেয়েদেরকে তিন বিঘা জমি লিখে দেন। তারপর থেকেই মায়ের খোঁজ নেয় না ছেলেরা।’ আর জামাই ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমার শ্বাশুরী আমার কাছেই ছিলো। কোন ছেলেরা তার খোঁজ খবর নেয় না। অসুস্থ্য হওয়ার খবর শোনার পরও তার ছেলেরা মাকে দেখতে আসে নি। তাই রাগ করে আজকে তার মেয়ে আঙ্গুর বেগম আমার শাশুড়ীকে ফাঁকা মাঠে ফেলে আসে।
মথুরাপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লিটন ও বদলগাছী থানার উপ-পরিদর্শক নিহার চন্দ্র বলেন, ‘ঘটনা জানার পর এখানে এসেছি। তার ছেলেদের সাথে কথা বলেছি, তার ছেলে মশিউরের কাছে আছে বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম। মায়ের ভরণ পোষনের দায়িত্ব না নিলে ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে ভরণ পোষন আইনে মামলা করা হবে।’
মোঃ খালেদ বিন ফিরোজ
নওগাঁ প্রতিনিধি