নিজস্ব প্রতিবেদক: বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা এবং মধুখালী এই তিন থানা মিলে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসন ২১১। বিশাল আয়তনের এই সংসদীয় আসনের ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক। ঐতিহাসিকভাবে এই আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত।
ফরিদপুর ১ আসনে বিএনপির গোড়াপত্তন হয় মূলত এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দল বিএনপির অর্ধ ডজন নেতাকর্মী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করার জন্য। যাদের মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. শাহাবুদ্দীন আহমেদ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রদল নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিউটন, বোয়ালমারী বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু, সাবেক যুবদল নেতা মনিরুজ্জামান মনির এবং মধুখালী বিএনপি নেতা ইউসুফ হোসাইন।
ড. শাহাবুদ্দীন আহমেদ অস্ট্রেলিয়া বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন। যার মধ্যে অন্যতম অ্যাসোসিয়েশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-অ্যাব, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-জেট্যাব, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং জিয়া সাইবারস ফোর্স।
গত ১৫ বছরে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে অনলাইন কিংবা অফলাইনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন এই নেতা। তিনি বলেন ফরিদপুর এক আসনের জনগণ স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমি চেষ্টা করেছি গত ২ দশক ধরে নেতাকর্মীদের সুখ দুঃখে পাশে থাকতে। গত আওয়ামী সরকারের শত হামলা মামলা আর নির্যাতন উপেক্ষা করে চেষ্টা করেছি জনগণকে সংগঠিত করতে। চেষ্টা করেছি আর্থিক এবং মানসিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে। তিনি আরো বলেন খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিশনারি নেতৃত্বে বিএনপি মনোনয়নের ক্ষেত্রে এবার তরুণ এবং শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দিবেন। সেদিক বিবেচনায় আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। তিনি বলেন সততা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দলের প্রতি ডেডিকেশনের দিক দিয়ে আমি সবার চেয়ে এগিয়ে। আমি মনোনয়ন পেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব প্রথমবারের মতো এই আসনটি বিএনপির জন্য উপহার দিতে।
কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বিভিন্ন সভা সমাবেশ এবং কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ৭’ই জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী আরিফুল হকের ঈগল মার্কার পক্ষে কাজ করা, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের দলে ভেড়ান এবং সাংবাদিকের বাড়িতে হামলার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক এই নেতার বিরুদ্ধে ফরিদপুর ১ এর শীর্ষ ৩৪ জন নেতার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং তারেক রহমানের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সত্য নয়। গত ১৫ বছর বিএনপির জন্য কাজ করেছি এবং দল আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে ৯০’র সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্র নেতা জনাব শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিউটন মিয়া ফরিদপুর-১ এ বিএনপির রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। সভা সমাবেশ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ফরিদপুর -১ এ বিএনপির প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। গত ১৫ বছরে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করেছি স্বৈরাচার হাসিনা বিরুদ্ধে আন্দোলনে। আশা করি দল আমাকে এই আসনে মনোনয়ন দিবে।
বোয়ালমারী বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু ফরিদপুর এক আসনের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং দলীয় প্রোগ্রামের মাধ্যমে তিনি জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি বলেন সারাজীবন বিএনপির জন্য কাজ করেছি আশা করি দল এবার আমাকে মূল্যায়ন করবে।
অন্যদিকে সাবেক যুবদল নেতা মনিরুজ্জামান মনির এবং মধুখালী বিএনপি নেতা ইউসুফ হোসেন ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতা কর্মীদের মন জয় করতে। যোগাযোগ করা হলে উভয়ে দাবি করেন তারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। মনিরুজ্জামান মনির বলেন বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে জনগণের পাশে থেকেছি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করি। এদিকে ইউসুফ হোসাইন বলেন ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে অদ্যবধি দল ও ফরিদপুর ১ এর জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হয়ে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান দল যাকেই নমিনেশন দিবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করব। সাথে সাথে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তারা অনুরোধ করেন সুবিধাভোগী এবং বিতর্কিত কাউকে যেন নমিনেশন দেওয়া না হয়। এলাকায় বেশ কয়েকজন সাধারণ জনগণে সাথে আলাপকালে তারা বলেন এ বছর ফরিদপুর-১ আসনটি বিএনপির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। সৎ, উচ্চশিক্ষিত, অপেক্ষাকৃত তরুণ যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন পেলে এবার এ আসনটিতে বিএনপি জয়লাভ করবে বলে অনেকেই আশা ব্যক্ত করেন।