মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি :
ভারত সরকার ট্যুরিস্ট, বিজনেস ভিসা বন্ধ করে দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার ক্রমেই কমে আসছে। তবে মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করায় যাত্রী পারাপার কমে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। বেনাপোল দিয়ে ভ্রমনকর বাবদ বছরে প্রায় দুইশ‘ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে সরকার। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে যাত্রী যাতায়াত কমে যাওয়ায় এই খাতে রাজস্ব আদায়ে ধ্বস নামতে শুরু করেছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বছরে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার রাজস্ব আসে বেনাপোল দিয়ে ভারত গমনাগমনকারী পাসপোর্টযাত্রীদের ভ্রমন কর থেকে। ৫ আগস্টের আগে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় হতো এ খাত থেকে। বর্তমানে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপারে রাজস্ব আদায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটিতে নেমে এসেছে। একই সময় আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ হাজারেরও অধিক যাত্রী পারপার হতো এ পথে। বর্তমানে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকের নিচে।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৬ দিনে (১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর) বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ৬৩ হাজার ৫৭৭ জন দেশি বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী পারাপার করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৩১ হাজার ৯৭৭ জন ও ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৩১ হাজার ৬০০ জন। বাংলাদেশী যাত্রীদের বিজনেস ভিসা বন্ধ থাকলেও ভারতীয় যাত্রীরা বিজনেস ভিসায় প্রতিদিন শত শত লোক আসা যাওয়া করছে। গত ১৬ দিনে বেনাপোল দিয়ে শুধু মাত্র ৩০ হাজার ৭০ জন ভারতীয় পাসপোর্টযাত্রী পারাপার করেছে দুই দেশের মধ্যে। এদের মধ্যে ভারতে ফিরে গেছে ১৫ হাজার ২০০ জন ও ভারত থেকে এদেশে এসেছেন ১৪ হাজার ৮৭০ জন। ল্যাগেজ ব্যবসার সাথে জড়িত অধিকাংশ এসব ভারতীয় যাত্রী। বেনাপোল চেকপোস্টের চোরাচালানী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এরা প্রতিদিন এ পথে চোরাচালানী মালামাল নিয়ে পারাপার হচ্ছে।
বেনাপোল থেকে কোলকাতার দুরত্ব কম হওয়ায় অধিকাংশ পাসপোর্টযাত্রীরা এ পথে ভারতে যেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে থাকেন। ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের অধিকাংশই রোগী। তবে ট্যুরিস্ট, বিজনেস, স্টুডেন্ট যাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। ভারত সরকার ভিসা বন্ধ করে দেয়ায় বেকায়দায় পড়েছে রোগীরা। ভারত সরকার বিজনেস ভিসা না দেওয়াতে দেশের বৃহত্তর স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারী কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ভারত সরকার ভিসা বন্ধ করাতে বিপাকে পড়েছেন রোগীসহ নানা পেশার মানুষ। বর্তমানে আগের থাকা ভিসায় পারাপার করছে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। তবে যাত্রী কম থাকায় দ্রæত পাসপোর্ট অনলাইনে এন্টিসহ সকল কাজ হওয়াতে খুশি যাত্রীরা। তবে ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে হওয়াতে বিপাকে পড়তে পারেন রোগীরা এমনটা আশঙ্কা করছেন তারা। দ্রæত সকল সমস্যা কাটিয়ে দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নতুন করে ভিসার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার এমনটাই চাওয়া সকলের।
ভারতে চিকিৎসা করাতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছি। বর্তমানে ভিসার খুব সমস্যা। আবেদনের দীর্ঘদিন পর কোন রকম চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা পেলেও ভ্রমন ভিসা একদমই নেই। আগামী দিনে আর ভিসা পাব কিনা সন্দেহ আছে।
ভারতগামী যাত্রী কমলা রানী বলেন, আগে থেকে জানতাম ইমিগ্রেশনে অনেক লম্বা লাইন থাকে, অনেক যাত্রীর ভীড় থাকতো। কিন্তু আজ এসে দেখলাম মানুষজন একেবারে নেই বললেই চলে। আমরা খুব নিরিবিলি যাচ্ছি। এখন যেহেতু ভারত সরকার ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের ভিসা শেষ পর্যায়ে। পরবর্তীতে আর ভিসা পাব কিনা জানিনা।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহসান বলেন, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পূর্বে ৮ থেকে ৯ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় হাইকমিশন অফিস ভিসা না দেওয়ায় যাত্রী সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। এই পথ দিয়ে সকল ভিসায় পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারছেন। আমরা যাত্রীদের সকল প্রকার সহযোগিতা করে দুই দেশে পারাপারের সুযোগ করে দিচ্ছি।