বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ ছেড়ে স্বৈরাচারের মাথা পালিয়ে গেলেও তাদের পেট, লেজ ও প্রেতাত্মার রয়ে গেছে। তারা নানা ষড়যন্ত্র অব্যহত রেখেছে। এছাড়াও বিএনপির জনসমর্থন দেখে অনেকের হিংসা হচ্ছে, তারাও বসে নেই। অতীতেও এই দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। দেশের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই বিএনপির সকল নেতাকর্মীকে সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রকে মেরামত করতে চাই। এজন্য আমরা ৩১ দফা কর্ম সূচি ঘোষণা করেছি। আমরা যদি আমাদের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সফল ও বাস্তবায়ন করতে চাই- তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে রাস্ট্র ক্ষমতায় যেতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে, অবশ্যই আমাদেরকে সরকার গঠণ করতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে। আমরা যদি সেটি করতে সক্ষম না হই তাহলে আমাদের এতদিনের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। এজন্য জনগণের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন, জনগণের আস্থার ভিতরে আমাদেরকে থাকতে হবে। আর এজন্য আমাদের প্রত্যেককে আমাদের অবস্থান থেকে সঠিক কাজটি করতে হবে, আমাদের অনৈতিক ও খারাপ কাজ ত্যাগ করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে ও শক্ত অবস্থান নিতে হবে। জনগণের আস্থা রাখতে হলে কাজ করতে হবে। সুন্দর ব্যবহার দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ক্ষমতায় আসতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন জনসমর্থন।

মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর টেকনগপাড়া এলাকায় সাগর সৈকত কনভেশন হল মিলনায়তনে গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ জেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি কর্মশালায় ভার্চুয়ালী যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান আলোচক ছিলেন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী নির্বাচন অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে কঠিন নির্বাচন হবে। আসন্ন চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে সফল হতে হলে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তাই আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সাথে রাখুন। আমরা জাল ভোট দিয়ে, কারচুপি করে, নিশি ভোটে, জোর করে ক্ষমতায় যেতে চাই না। মানুষ মুক্তভাবে ভোট দিবে এমন একটি মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দিতে হবে। তবেই জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপিকে বিবেচনা করবে।

তিনি আরো বলেন, বিগত স্বৈরাচারের ১৫ বছরের আমলে অত্যাচার, মিথ্যা ও গায়েবী মামলা আপনারা সহ্য করেছেন। আমাদের বহু সহকর্মী আছেন যারা হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় স্বজনদের জানাজায় অংশ নিয়েছেন, আমাদের অনেক সহকর্মী হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় হাসপাতালের ফ্লোরে মৃত্যু বরণ করেছেন, আবার অনেকে হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় কারাগারের ভিতরে মৃত্যু বরণ করেছেন। যেই দলের নেতা-কর্মীরা এতো অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে এ পর্যন্ত এসেছেন, দলের ঐক্য ও আস্থা ধরে রেখেছেন, সেইদলের ভিতরে থেকে যদি কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই আস্থাকে আঘাত করে, বিশ্বাসকে নষ্ট করে ও দলের ক্ষতি করে- তাহলে একজন সহকর্মী হিসেবে আপনাদের প্রত্যেকের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে ও নেতা হিসেবে নির্দেশনা থাকবে সেই লোকগুলোকে শক্তহাতে দমন করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের প্রত্যেককে একে অপরের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যাতে দলের কোন সুনাম ক্ষুন্ন না হয়। মানুষের ভালবাসার আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব জনগণের নয়, এ দায়িত্ব আপনার আমার। আপনাকে দিয়ে মানুষ বিএনপিকে বিচার করবে। আপনি ভালো হলে মানুষ বিএনপিকে ভালো বলবে, আর খারাপ হলে দলকে খারাপ বলবে।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মিডিয়া সেলের সদস্যা মাহমুদা হাবিবা, কেন্দ্রীয় সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, শাহজাহান ফকির, আখতারুল আলম মাস্টার, জয়নাল আবেদীন রিজভী, সুরুজ, মনির হোসেন, আতাউর রহমান, সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, সাখাওয়াত হোসেন সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।