নির্বাচন পেতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে সেটা অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।তিনি বলেছেন, ‘আমরা অপেক্ষা করতে রাজি আছি… সংস্কার হবে… অপেক্ষা করব। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এভাবে চলতে পারে না।’

আজ সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এদেশের মানুষ ভোটের অধিকার চায়। আমরা শুনেছি, আমরা দেখেছি, ভোটের কথা বললে, ইলেকশনের কথা বললে অনেকের মুখ বাঁকা হয়ে যায়। আমরা পরিস্কার বলতে চাই… আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব পরিস্কার বলেছেন, আমাদেরকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে… এটা একটু আমাদেরকে জানিয়ে দিন।’

তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের…. মানুষ আজকে বাঁচার আশ্রয় খুঁজছে। মানুষ কথা বলতে পারছে ঠিকই, কিন্তু দেশের মানুষের অভাবের তাড়না রয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। আমরা চাই, এই সরকার একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।’

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন যথার্থ বলেছেন। নির্বাচনে যারা অংশীজন তারা যদি চায়, উনি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেবেন। সাধুবাদ জানাই, কিন্তু এর বাইরে কোনো কথা থাকতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটা বিষয়… এটা যুগ যুগ ধরে চলবে.. এটা নতুন কিছু না। এটা হঠাৎ করে… এটা একটা প্যাকেট না, একটা প্যাকেটে করে এনে আমি সংস্কার হয়ে গেলাম। এটা সময়ের বিবর্তনে, সময়ের চাহিদায় সংস্কার প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি, এই সরকার দ্রুততম সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফেরত দেবে এটাই আমাদের কাম্য।’

‘আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়’, যোগ করেন মির্জা আব্বাস।

তিনি আরও বলেন, ‘একজন উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে বলেছেন, আমি তার জবাব দিতে চাই না… তিনি বলেছেন ৫৩ বছর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কী করেছেন? আমি বলতে চাই, আপনি রাজনীতি করেন নাই… রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে একটু দয়া করে সম্মান নিয়ে কথা বলবেন। একজন রাজনীতিক এক দিনে তৈরি হয়ে যায়নি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান কিংবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছেন… এরা এক দিনে তৈরি হয় নাই। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যা বলেন তাদের কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করেন, মানার চেষ্টা করেন। এই কথা ভাববেন না যে, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করি। ক্ষমতা যাওয়ার কথা আমরা কখনো বলি না, আজও বলি নাই, কখনো বলব না। আমরা চাই, জনগণের ভোটের অধিকার, আমরা চাই, জনগণের শাসন।’

বিজয় দিবসে বিএনপি প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই বিজয় দিবসে আজকে যে জনগণের ঢল.. আমি এত বছর আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে এই যাবৎকাল…. সেই আমাদের বিজয় স্তম্ভ… জাতীয় সৌধ সাভারে গেছি, এই মাজারে (জিয়াউর রহমানের সমাধি) এসেছি বহুবার… কিন্তু আজকের মতো এ রকম জনগণের ঢল আমার জীবনে আমি কখনো দেখিনি।’

‘এর একটাই মাত্র কারণ জনগণের বাধভাঙা উল্লাস। এদেশের মানুষ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। এদেশের মানুষ চায় এক স্বৈরাচার মুক্ত করে আমরা জনগণ যেন আর কোনো স্বৈরাচারের হাতে না পড়ি’, যোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

বিজয় দিবসে নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আজকে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দেশের মানুষ, দেশের জনগণকে এ বিজয় উৎসব পালন করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মী জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

এ সময়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মাসুদ আহমেদ তালুকদার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নিরব, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, দক্ষিনের তানভীর আহমেদ রবিন, যুব দলের আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।