সিরিয়ার সদ্য পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তার পলায়নের খবর মিত্রদের কাউকে জানাননি। বরং বিদ্রোহী গোষ্ঠী রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী হলে এবং কয়েকটি শহর তাদের পদানত হলেই তিনি পলায়ন করেন।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাশারের মিত্র ও কর্মকর্তারা তার এই আচরণে প্রতারিত হয়েছেন। আস্থাভাজনরা হয়েছেন অবাক ও বিস্মিত। রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাশার সরকারের ঘনিষ্ঠ ১৪ জন কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এক কর্মকর্তা জানান, শনিবার রাজধানী দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক ডাকেন বাশার। সেখানে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বাশার তখন বলেন, ‘রাশিয়া শিগগিরই সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছে যাবে। তারা এখন পথে আছে।’ এ সময় বাহিনীকে কষ্ট করে হলেও পজিশন ধরে রাখার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, অথচ এই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানী ত্যাগ করেন বাশার।

প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে বাশারের এক সহযোগী বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাশার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পরিচালককে বললেন, আমি বাসায় যাচ্ছি। অথচ তখনই তিনি সবকিছু গুছিয়ে দামেস্ক বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, বাশার পলায়নের আগে তার প্রেস সচিব বুছাইনা শাবানকে বাসায় আসতে বলেন। যেন তিনি একটি ভাষণ লিখে দেন। প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগের আগে ওই ভাষণটি দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে পৌঁছার পর দেখেন, বাশার তখন আর নেই।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষণকারী সংস্থা মুবারাতুল ইসলাহের নির্বাহী পরিচালক নাদিম হাওরি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাশার তার শেষ ভাষণটি দেয়ারও ফুরসত পাননি। তিনি তার সৈন্যদেরও একত্রিত করেননি। আর মিত্রদের ছেড়ে গেছেন নিয়তির দয়ার ‍উপর।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছরের শাসনকালে বাশার কেবল মিত্রদের সহায়তার উপর ভর করেই টিকে ছিলেন। এখন যখন মিত্রদের সহায়তা পেলেন না, তখন তিনি সবার সাথে প্রতারণা করে গোপনে দেশত্যাগ করেন। এটি ইতিহাসের পাতায় স্বৈরাচারদের ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে।

বাশার সরকারের তিন কর্মকর্তা বলেন, বাশার পলায়নের সময় এতটাই গোপনীয়তা অবলম্বন করেছিলেন যে তিনি তার ভাই মাহির আল আসাদকেও বিষয়টি জানাননি। অথচ মাহির তখনো বাশারের ক্ষমতার জন্য বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করে যাচ্ছিলেন।

তারা আরো জানান, মাহির যখন বিষয়টি জানতে পারেন, তিনি একটি বিমানে চড়ে প্রথমে ইরাক, এরপর সেখান থেকে রাশিয়া পাড়ি জমান।

বাশারের সাবেক সহযোগী এবং লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, বাশারের আরো দু’জন আত্মীয় ইহাব ও ইয়াদ মাখলুফ। তারাও প্রথমে বাশারের পলায়নের খবর জানতে পারেননি। যখন খবর পেলেন, গাড়িযোগে তারা সিরিয়া সীমান্ত পার হতে চাইলেন। কিন্তু ততক্ষণে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাদেরকে ধাওয়া করে। পরে ইহাবকে তারা গুলি করে হত্যা করে। আর ইয়াদ গুরুতর আহত হন।

তবে লেবাননের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

দু’জন কূটনীতিকের সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ প্রথমে বিমানে চড়ে লাজেকি জেলার একটি রুশ সামরিক ঘাঁটিতে আত্মগোপন করেন। এ সময় বিমানের ট্রান্সসিভার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, যেন বিরোধীরা ট্র্যাক করে তার সন্ধান না পায়। এরপর সেখান থেকে তিনি মস্কো পাড়ি জমান। সেখানে স্ত্রী ও তিন সন্তান তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

আঞ্চলীয় তিন কূটনীতিবিদ বলেছেন, বাশার নভেম্বরের ২৮ তারিখ মস্কো গিয়ে পৌঁছে। অর্থাৎ বিদ্রোহী যেদিন হালব দখল করে, তার একদিন পরেই।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্র পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিরিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য রাশিয়া অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন তাদের প্রধান মনোযোগ ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে।