মজুতদারদের কারসাজিতে নওগাঁর মহাদেবপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে বাড়ছে আলুর দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আলুর এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য মজুতদার ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন ক্রেতা ও ভোক্তারা। গত মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলনের পরও কম সরবরাহের অজুহাতে ইচ্ছে মত দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ২০ অক্টোবর সরকার আলু আমদানীতে শুল্ক কর কমিয়েছে। এতে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ আলু আমদানি হলেও বাজারে এর কোন ইতিবাচক প্রভাব পরেনি। উল্টো আলুর দাম আরো বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ এলাকার কৃষকরা ব্যাংক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেন।

কৃষকরা বলেন, ফসলী কৃষি ঋণের মেয়াদ মাত্র ৬ মাস। এ কারণে মৌসুমের শুরুতেই কৃষকরা আলু বিক্রি করে ঋণ পরিশোধে বাধ্য হন। এ সব আলু মজুতদাররা ক্রয় করে বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। উৎপাদক পর্যায়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে তারা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। এ আলুর দাম বর্তমানে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কিভাবে হয় এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। আলু চাষ ও ব্যবসার সাথে জড়িত বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে মজুতদাররা যে আলু ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে সংরক্ষণ করেছেন সে আলুর হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ, যাতায়াত ভাড়া, শ্রমিকদের মজুরীসহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে কেজি প্রতি ৩৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। মজুতদাররা এ আলু কেজি প্রতি ৫ টাকা লাভে বিক্রি করলেও পাইকারী বাজারে আলুর কেজি ৪০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুরে অবস্থিত ফয়েজ উদ্দীন কোল্ড স্টোরেজসহ আশেপাশের কয়েকটি হিমাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিমাগার পর্যায়ে পাইকারীভাবে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

অন্যান্য বছর গত বছর এ সময় হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। ফয়েজ উদ্দীন কোল্ড স্টোরেজ এর পরিচালক রাজিবুল, বাপ্পী বলেন, এ কোল্ড স্টোরেজের ধারণ ক্ষমতা ১ লক্ষ ৬৫ হাজার বস্তা। এ কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত সব আলুই ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে ৫ হাজার বস্তার মত আলু সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যান্য বছর নভেম্বর মাসের শেষ দিকেই বাজারে আগাম আলু উঠতে শুরু করে। কিন্তু এবার অতি বৃষ্টি এবং আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় কৃষকরা এখনো আলু বপন করতেই পারেননি। এ কারণে নতুন আলু বাজারে আসতে এবার বেশ বিলম্ব হবে। এটিকে সুযোগ মনে করে মজুতদাররা দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ক্যুনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব এর নওগাঁ জেলার সভাপতি আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, এখন কৃষকের ঘরে আলু নেই। মজুতদাররা হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ করে ইচ্ছেমত দাম বাড়াচ্ছে। এসব অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রুবেল আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরবরাহ ও বাজার মনিটরিং করার জন্য গঠিত টাস্কফোর্স নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।

আজাদুল ইসলাম, মহাদেবপুর, নওগাঁ।