সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ। ভাব-ভঙ্গি,আচার-আচরণে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বড় বাঙ্গালী,শেখ হাসিনার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার,দলবাজির ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদেরের চেয়ে বড় দলবাজ ছিলেন । পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দিয়েছেন ডিগবাজি। এখন নিজেকে দাবি করেন সাবেক ছাত্রদল নেতা। কখনো দাবি করছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ঘনিষ্ঠজন। ক্ষমতার পালাবদলের পর সমাজসেবা অধিদপ্তরে এমন ‘দ্বৈত রূপ’ নিয়েই নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করার চেষ্টা করছেন দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ। একদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আন্দোলন উস্কে দিয়ে দপ্তরে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছেন অন্যদিকে মহাপরিচালকের পক্ষাবলম্বন করার অভিনয় করে দ্বৈত রূপের চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এডি এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময় নানাবিধ অনৈতিক সুবিধাভোগী। বিশেষ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের প্রশ্রয়ে খালিদ সাইফুল্লাহ অনেক অপকর্ম করেছেন। নিয়োগ,পদোন্নতির তদবির,প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতসহ অনিয়ম দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর খালিদ সাইফুল্লাহ ভোল পাল্টাতে শুরু করেন। এখন তিনি অন্তবর্তী সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টায় মরিয়া। এমনকি জুলাই-আগস্ট স্মৃতি ফাউন্ডেশনেও নিজেকে পূনবার্সিত করার চেষ্টা করছেন এই সাইফুল্লাহ। এসব কারনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।

অভিযোগ আছে, এডি সাইফুল্লাহ সমাজসেবা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে সারাদেশে সিন্ডিকেট তৈরি করে অবৈধ উপায়ে নিবন্ধন দেওয়া, ভূয়া কমিটি গঠন এবং অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।
বেদে, হিজড়া এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালনকালে সিন্ডিকেট ব্যবহার করে এই স্পর্শকাতর প্রকল্পে পুনর্বাসন এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিশাল বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে খালিদ সাইফুল্লাহ’র বিরুদ্ধে।

সূত্রমতে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় বিগত সরকারের সময় খালিদ সাইফুল্লাহ এসব অপকর্ম করলেও তার বিরুদ্ধে কোন দাপ্তরিক নেয়া হয়নি। বরং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে গেছেন। সাবেক এই মন্ত্রীকে অভিভাবক বানিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে দেদারছে অনিয়ম, লুটপাট, নিয়োগ ও বদলি, কমিশন বাণিজ্য করে গেছেন।

ছবি কথা বলে। দলের প্রতি দরদ ও ভক্তির বহি:প্রকাশ ঘটেছে। এটাকে দাপ্তরিক কাজ বলে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এধরনের কাজ করার জন্যে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি কোন নির্দেশনা ছিলনা। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সুবিধা নেয়াই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।

এক ছবি হাজার কথা বলে। পোস্ট দেখে সরকারি কর্মকর্তার স্থলে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী মনে হয়। দলের নেতাদের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধার যেন অন্ত ছিলনা। এখন কিনা তিনি বলছেন-ছাত্র দলের নেতা ছিলেন। একবারে ৩৬০ ডিগ্রি ডিগবাজি।

বহুরূপী সাইফুল্লাহর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ে তিনি সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের তোয়াজ করে বিভিন্ন পোস্ট দেন। এছাড়া সাবেক এই মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত পোস্ট তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের দাপ্তরিক ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করতেন। এভাবে নিজেকে সাবেক এই মন্ত্রীর আস্থাভাজন দেখিয়ে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর খবরদারি করতেন।