রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) হামলা চালিয়েছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজটির ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন তারা। পরে দুই পক্ষ দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা।

এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশ সদস্যরা। তারা ডিএমআরসির শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দেন।

জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী গিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। ওই সময় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।

এর আগে সকাল ১০টা থেকে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকে। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব বাজারের দিকে অগ্রসর হয়ে সাত কলেজের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জড়ো হতে থাকে।

পুলিশ সদস্যরা জানান, ডেমরার উদ্দেশে রওনা হওয়া কলেজ শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে যাত্রাবাড়ীতে ব্যারিকেড দেন তারা। তবে সেই ব্যারিকেড ভেঙেই ডেমরা এলাকায় গিয়ে মোল্লা কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায় তারা।

এর আগে কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কিছু শিক্ষার্থী ওই কলেজে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হামলা, ভাঙচুর এবং ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় মোল্লা কলেজের গেট ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ার, কম্পিউটার-ল্যাপটপ-ডকুমেন্টসহ মূল্যবান অসংখ্য জিনিস লুটপাট করে নিয়ে যেতে দেখা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের।

তবে হামলা থেকে রক্ষা পেতে মোল্লা কলেজের গেট বন্ধ করে দিয়েছেন ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে মোল্লা কলেজ ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শুরুতে হামলাকারীরা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। বেলা ১টার কিছু আগে তাদের ধাওয়া দেয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়েছে।

সে সময় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে দেখা গেছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন বলে জানান পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মফিজুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জেরে গতকাল রবিবার পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের দিনের হামলার জের ধরে আজ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়।

উল্লেখ্য, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার গত ১৬ নভেম্বর সকালে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। ১৮ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।