বিএনপি ভবিষ্যতে সরকার গঠনে সক্ষম হলে সারাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের নামে স্থান ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণের প্রস্তাব করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি করতে বিগত ১৭ বছরে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির বহু নেতাকর্মী আত্মাহুতি দিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জুলাই-আগস্ট মাসেও বহু মানুষ শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। তাদের পাশে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দাঁড়ানো সবার দায়িত্ব।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামীতে সরকারে গেলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব পরিবারে এ ধরনের পঙ্গু মানুষ আছে, তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। যারা শহিদ হয়েছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন এরকম প্রতিটি মানুষের নামে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হবে। এই মানুষগুলোর নাম যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য রাষ্ট্রীয় যে সকল প্রতিষ্ঠান সেটি থানা পর্যায়ে হোক, জেলা পর্যায়ে হোক, বিভাগ পর্যায় হোক, ঢাকা শহরে হোক বিভিন্ন স্থানে এই শহিদদের নামে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামকরণ করার একটি প্রস্তাবনা আমাদের আছে।
সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আয়োজনে ২৪’র গণআন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতা ও দুস্থদের মাঝে হুইলচেয়ার বিতরণকালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন করেছি। মানুষ তার অধিকার ও কথা বলার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য যে আন্দোলন করেছে, সেই আন্দোলনে যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আজকের সেরকম কিছু সংখ্যক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত। এই পরিস্থিতি অর্জন করার জন্য সমগ্র বাংলাদেশে দলমত নির্বিশেষে বহু মানুষ অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মী, অরাজনৈতিক কর্মী কিন্তু দেশপ্রেমিক মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সকল মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে কতটুকু সাহায্য করা সম্ভব আমরা হয়তো কেউই জানি না। তবে যে মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা শহিদ হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা এখনো আছেন। যারা বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারাসহ তাদের পরিবারের পাশে কতটুকু দাঁড়ানো যাবে বলতে পারবো না। কিন্তু আমাদের জন্য তারা যেই আত্মত্যাগ করেছেন, এখন আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব এই মানুষগুলোর পাশে যতটুকু সম্ভব দাঁড়ানো। যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। আমি মনে করি, দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলের এটি একটি দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে, দেশের জন্য ও মানুষের জন্য বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে ভালো কিছু করার চেষ্টা করি। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, যতটুকু অবস্থান আছে, যতটুকু আমরা সক্ষম, তার ভিত্তিতে মানুষের বিপদে আপদে সাহায্য করা আমাদের উচিত।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা মাঠে ছিলেন, এরকম কয়েকজন মানুষকে আমরা সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের এই চেষ্টাটি শুধু এখানে থেমে থাকলেই হবে না। আজকে হুইল চেয়ার দিচ্ছি, কারণ কোনো কারণে তারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বিজ্ঞান বর্তমানে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই যে, আজ না হলেও কাল এমন কোনো চিকিৎসা তাদেরকে দিতে সক্ষম হবো, সেই চিকিৎসার সুবিধার কারণে তারা হয়তো আবার আগের মতো হাঁটতে চলতে ফিরতে পারবেন, নিজের পায়ে হুইলচেয়ারের প্রয়োজন হবে না।
তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে বহু মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন। কতজনকে আমরা সেই চিকিৎসার সুবিধা দিতে পারবো, সেটি বলতে পারবো না। তবে বসে থাকলে ঠিক হবে না। যে কয়জনকে আমরা পারি এগিয়ে আসা উচিত। শুধু রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিসেবে আমি আহ্বান করবো সমাজের প্রতিটি মানুষকে, যাদের যতটুকুই সামর্থ্য আছে সেই সাধ্য অনুযায়ী তারা এগিয়ে আসবেন।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন বাদেও সামাজিকভাবে বহু মানুষ আছেন যারা বিভিন্নভাবে জন্মগত কারণেই হোক বা অসুখেই হোক পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের সামাজিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদি পরিবারের কোনো মানুষ পঙ্গু হয়ে থাকে, সে পরিবারের কাছে একটি বোঝার মতো হয়ে থাকে। সেই পরিবারের কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। জনগণের সমর্থনে বিএনপি আগামীতে সরকার গঠনে সক্ষম হলে সরকারের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে আমাদের একটা উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকবে সমগ্র বাংলাদেশে সে যে পরিবারের সদস্য হোক, স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ হোক আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব যেসকল পরিবারে এরকম সদস্য আছে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। যাতে করে সে পঙ্গু মানুষগুলো নিজেরা যতটুকু সম্ভব স্বাবলম্বী হতে পারে।
তারেক রহমানের বক্তব্য শেষে ১০ পঙ্গু ব্যক্তির মাঝে অত্যাধুনিক মানের হুইলচেয়ার বিতরণ করা হয়। আগামীতে সারাদেশে আরও হুইল চেয়ার বিতরণ করা হবে বলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে ভার্চুয়ালে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত নেতাকর্মীদের আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তে দেখা যায়।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন বকুল, মাহমুদুর রহমান সুমন, ড. এম এ মুহিত প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের লড়াই। বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই। যাচ্ছের বয়স আজ ২০-২২ বছর, তারা ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোট দেওয়া জানে না। তারা আর কত সময় অপেক্ষা করবে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে গণতন্ত্রের প্রতীক, গণতন্ত্রের মডেল। তা না করে এই যে প্রলম্বিত করা, এই প্রলম্বিত করা আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোনো জটিলতা হচ্ছে। গণতন্ত্র চর্চা ও গণতন্ত্রের বিকাশ কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে। তা না হলে তিনি কেন এ কথা বলছেন? এত লম্বা সময়ের কথা বলছেন। এ সরকারের মধ্যেই কোথাও কোনো ঘাপলা আছে। এ সরকারের মধ্যেই কেউ মাস্টার প্ল্যান আসছে কিনা এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।