গাজীপুরের কাশিমপুরের চক্রবর্তী এলাকায় সোমবার দুই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৫জন আহত হয়েছে। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা একটি পোশাক কারখানা ও দুটি কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। কালিয়াকৈর এবং ঢাকা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের চক্রবর্তী এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা গত দুইদিন ধরে বকেয়া বেতনের দাবীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছিল। সোমবারও বেক্সিমকো শ্রমিকেরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চক্রবর্তী এলাকায় তৃতীয় দিনের মতো ফের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিক অসন্তেষের কারণে আশপাশের অন্তত ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে গত ১ নভেম্বর থেকে কাশিমপুর থানার পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড নামের কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। গত রবিবার কারখানা খুলে দেওয়া হলেও দুপুরের পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার সকালে ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ টানিয়ে দেওয়া দেখেন। ওই নোটিশ দেখে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবীতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা চক্রবর্তীর পাশ্ববর্তী জিরানী এলাকায় অবস্থান নিয়ে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের অবরোধ সৃষ্টি করেন।
একই সময়ে একই মহাসড়কের কাছাকাছি স্থানে ওই দুই কারখানার শ্রমিকেরা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। পরে তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হন। আহত শ্রমিকদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের সময় কিছু শ্রমিক পাশ্বববর্তী পানিশাইল ও কলতাসুতি এলাকায় ঢুকে পড়ে এবং এলাকার লোকজনদের মারধর করেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দেয়। বেশ কিছু সময় দুই কারখানা শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকোর কিছু শ্রমিক পূর্ব কলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন ও ভাংচুর করে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিকেলে স্থানীয় বিগবস কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুইটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভায়। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, খবর পেয়ে ফায়র সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে শ্রমিকরা বাঁধা দেয়। পরে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে কালিয়াকৈর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ও ঢাকা ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা থানা ও শিল্প পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছে।
এ সংবাদ লেখার সময় ( পৌণে ৬টা) শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শ্রমিকেরা এখনও মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে।