জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ও লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন তার পরিবার এবং ভক্তরা ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের হতে গড়া নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন করা হয়। বুধবার সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশ পল্লীতে ভিড় জমায়।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১মিনিটে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হাতে গড়া নুহাশ পল্লীতে এক হাজার ৭৬টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে পুরো নুহাশপল্লী আলোকিত হয়ে উঠে। পরে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জন্মদিনের কেক কেটে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের কর্মসূচি শুরু করে। সকালে নুহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত। পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার ছেলে নিনিত ও শাওনের পিতা মোহাম্মদ আলী নুহাশপল্লীতে আসেন। শাওন তার দুই ছেলে ও পিতা এবং নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ও হুমায়ুনভক্তদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারা নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চির নিদ্রায় শায়িত লেখক হুমায়ূন আহমেদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ, কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন। এসময় তার পরিবারের সদস্য এবং বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন। প্রয়াত লেখকের কবর জিয়ারত শেষে বেলা ১১টার দিকে নুহাশপল্লীতে হোয়াইট হাউসের পাশে স্থাপিত হুমায়ূন আহমেদের ম্যূরালের সামনে আপেল গাছ তলায় দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতকে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিনের কেক কাটেন মেহের আফরোজ শাওন। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এসময় শতাধিক হুমায়ূনভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরাসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, নুহাশপল্লীটা হুমায়ূন আহমেদ করেছিলেন গাছ লাগানোর জন্য। হুমায়ূন আহমেদ বলতেন বাংলাদেশের মাটিতে হয় এমন সমস্ত গাছ এখানে থাকবে। গাছের প্রতি প্রেম ও ভালবাসার কারণে নুহাশপল্লীটা তৈরী হয়েছে। যখন যেখানেই দূর্লভ কোন গাছ পাওয়া যায় তা আমরা সংগ্রহ করে নুহাশপল্লীতে রোপন করি। গাছ দিয়েই নুহাশপল্লীর পরিচয় হচ্ছে গাছের মাধ্যমে। তাই নুহাশপল্লীকে নিয়ে নতুন করে কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই।

তিনি জানান, নুহাশপল্লীতে একটি স্যুটিং ফ্লোর ছিল সেটি এখন অচল হয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর কিছু কাজ ওই ফ্লোরে করা হয়েছিল। এখন সেটিতে কোন কাজ করা হয় না তাই এটি এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল আরো বলেন, হুমায়ূন আহমেদের জম্মবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশপল্লীতে প্রতিবারের মতোই আয়োজন রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ জীবিত থাকার সময় যেভাবে জন্মদিন পালন করতেন তার মৃত্যুর পর ঠিক একই ভাবে প্রতিবছর প্রিয় লেখকের জন্মদিন পালন করা হয়। রাতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে।

তিনি জানান, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারেও হলুদ পাঞ্জাবী ও শাড়ি পড়ে একদল হিমু নুহাশপল্লীতে এসে হুমায়ূন আহমেদের কবরে শ্রদ্ধা জানান। গাজীপুর শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ভেতরে পিরুজালী এলাকায় অবস্থিত নুহাশপল্লী। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ নানা বয়সী ভক্তরা। কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে সাজানো গোছানো নুহাশপল্লীর বিভিন্ন স্থাপনা এবং নান্দনিক শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও নুহাশপল্লীতে আসেন তাদের প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের সমাধিস্থলে। তারা ঘুরে দেখেন নুহাশপল্লী পুরো এলাকা।

উল্লেখ্য, সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার ছায়া সুনিবিড় প্রত্যন্ত কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে লিচু তলায় তাকে সমাহিত করা হয়।