গাজীপুরের কাশিমপুরে পা বেঁধে দুই শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার ভোর রাতে তাদের লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। এদিকে মহানগরীর পূবাইলে পোশাক কারখানার এক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে তার স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামী। উভয় ঘটনায় ৭জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কাশিমপুর থানাধীন মাধবপুর উত্তর পাড়া এলাকার রেজাউল করিমের বাড়ির চারতলার ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে ভাড়া থেকে নাবিস্কো ফুড প্যাকেজিংয়ের স্থানীয় কারখানায় কাজ করতেন রাসেল হোসেন (২১) ও সুফিয়ান আহমেদ (২৩)। ওইভবনের নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রাজু ক্যাডেট একাডেমি নামের একটি স্কুল রয়েছে। মঙ্গলবার তারা কারখানায় অনুপস্থিত থাকায় কারখানার কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু উভয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কারখানা ছুটির পর তাদের সন্ধানে রাতে কারখানা থেকে তাদের বাসায় লোক পাঠানো হয়। তারা ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজা চাপানো অবস্থায় দেখতে পান। এসময় দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে তারা ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের ফ্লোরে দু’জনের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভোর রাতে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। নিহত দু’জনের পা কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। নিহতদের মধ্যে রাসেল হোসেন সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে এবং সুফিয়ান ভোলা জেলার সদর উপজেলার চরভেদুরা গ্রামের জাফর আলীর ছেলে।
জিএমপির কাশিমপুর থানার ওসি মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে যায়। লাশ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পা বাঁধা ও গলাকাটা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে পা বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে তাদের হত্যা করা হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ের ১০টার মধ্যে এ হত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির কেয়ার টেকার বকুলসহ মাহবুব, শান্ত, জাহিদকে থানায় আনা হয়েছে। এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
রাজু ক্যাডেট একাডেমি স্কুলের পরিচালক মোঃ সানোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার (৫ নবেম্বর) বিকেল ৫ টার দিকে ভবনের কেয়ারটেকার বকুল ফোন করে আমার কাছ থেকে চাবি নেয়। পরবর্তীতে চাবি ফেরত চাইলে পাশের দোকানে চাবি রাখা আছে বলে সে জানায়। পরে রাত ১০ টার দিকে বকুল ফোন করে খুনের ঘটনাটি জানায়।
এদিকে মহানগরীর পূবাইলে পোশাক কারখানার এক শ্রমিক তার স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম রাজিব আকন (৩২)। তিনি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার মধ্য বরিশাল এলাকার আবুল কালাম আকনের ছেলে।
জিএমপি’র পূবাইল থানার ওসি আমিরুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের পূবাইল থানাধীন হারবাইদ এলাকার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় হাড়িবাড়ির টেক এলাকার এএন্ড ট্রাউজার কারখানায় চাকুরি করতেন রাজিব আকন। গত রবিবার (৩ নবেম্বর) রাত ৭টার দিকে ছুটির পর কর্মস্থল থেকে ইজিবাইক যোগে বাড়ি তিনি। পথে টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের বসুগাঁও এলাকার সাইফ পাওয়ার ব্যাটারি তৈরীর কারখানার সামনে পৌছলে কয়েক যুবক দু’টি মোটরসাইকেল যোগে এসে ইজিবাইকটির গতিরোধ করে। পরে তারা রাজিবকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীরা রাজিবকে উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পর মঙ্গলবার মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, গত ৬/৭ মাস আগে কোহিনুর তার আগের স্বামী চাঁন মিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে রাজিবকে বিয়ে করেন। নেশাসক্ত চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। চাঁন মিয়া একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে জেল খানায় বন্দি ছিলেন। জেলে বন্দি থাকাবস্থায় চাঁন মিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে রাজিবকে বিয়ে করেন কোহিনুর। সম্প্রতি চাঁন মিয়া জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন। এ ঘটনার জেরে রাজিবকে হত্যা করে চাঁন মিয়া ও তার সহযোগিরা।