সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোররাতে খলিশাখালির মৎস্যঘের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় আরও ৬ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
কামরুল ইসলাম (৪০) নামে ওই ব্যক্তি উপজেলার খলিশাখালি এলাকার মৃত আবু বকর গাজীর ছেলে।
অভিযানে আটককৃতরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের নরিম সরদারের ছেলে নুরুজ্জামান, আশাশুনি উপজেলার শ্রীগঞ্জ গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে সোহেল, কালিগঞ্জ উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের রুহুল আমিন গাজীর ছেলে মেহেরাব আলী, একই উপজেলার কাশিবাটি গ্রামের রুহুল আমিন সরদারের ছেলে হাসিবুল হাসান সবুজ, আকরাম গাজির ছেলে রবিউল আউয়াল, বদরতলা এলাকার জামিল ফকিরের ছেলে আবুল হোসেন।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর মোহাম্মাদ জানান, খলিশাখালিতে ১ হাজার ৩২৮ বিঘা মৎস্যঘের নিয়ে বহুদিন ধরে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। গত ৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি হওয়ার সুযোগে খলিশাখালিতে অস্ত্র নিয়ে মৎস্যঘের দখলে নিতে বিভিন্ন সময় মহড়া দিতে থাকে। এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে খলিশাখালিতে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে ১৫টি হাতবোমা, ৩০টি ছোট হাতবোমাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক জানান, খলিশাখালি এলাকায় অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা মজুত রেখে মাছের ঘের দখল, এলাকায় ডাকাতিসহ নানা অপরাধ করে আসছিল আকরাম হোসেন, আরিফুল ইসলাম পাড়, সাইফুল ইসলাম গাজীসহ তাদের বাহিনী। তিনটি অবস্থান থেকে অপারেশন পরিচালনা করা হয়। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে প্রথমে ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। একপর্যায়ে স্থানীয় দেড় শতাধিক বাসিন্দা কামরুলসহ কয়েকজনকে ধরে ফেলে। বিক্ষুব্ধ জনসাধারণ ডাকাত কামরুলকে পিটুনি দেন। সেনা সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত কামরুল একজন দণ্ডিত অপরাধী এবং ডাকাত ছিলেন।
তিনি বলেন, অন্যান্য আটককৃত অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দেবহাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় ৫টি রামদা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ৭৫০ গ্রাম বারুদ, ৪টি মোবাইল ফোন, ১৫টি হাত বোমা, ৭ প্যাকেট হাতবোমায় ব্যবহৃত স্প্লিন্টার, ৩৮টি হাতবোমা উদ্ধার হয়েছে।
তবে নিহতের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন জানান, তার স্বামীকে মৎস্যঘের থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাতের আধারে মকরম শেখ, আকরাম হোসেন, আরিফুল ইসলাম পাড়, সাইফুল ইসলাম গাজী, কামরুল ইসলাম, রিপন হোসেন, গোপাল ঢালী, শরিফুল ইসলাম, আব্দুল গফুর, বাবলু গাজী, পুটু, রবিউল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম কালু, এসএম মহিউদ্দিনসহ আরও ৫০-৬০ জন ওই এলাকার মৎস্য চাষকৃত জমি জবরদখল নেয় এবং কোটি টাকার ঊর্ধ্বে জমির মালিক এবং লিজ গ্রহীতাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে সন্ত্রাসীরা ওই জমি দখলে নিতে এবং চাষকৃত মাছ লুট করার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে গত ২ অক্টোবর মালিক ও লিজগ্রহীতারা সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার কয়েক দিন যেতে না যেতেই মৎস্যঘেরের কর্মচারীদের জিম্মি করে কয়েক দফায় মাছ লুটের ঘটনা ঘটে।