যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন আশা প্রকাশ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেই নির্বাচনে যেন জনগণ ভোট দিতে পারে। নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে পারে। এটা আমাদের প্রত্যাশা। এটাই জনগণ চায়।’

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি সার্চ কমিটি ঘোষণা করেছে। সার্চ কমিশন গঠন করার আগে রাজনৈতিক দলেরগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন ছিল। এমন একটা প্রত্যাশা ছিল। যাই হোক এটি নিয়ে বড় ধরনের কোনও সমস্যা মনে করছি না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। যিনি এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তিনি পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। তিনি নিজেও বলেছেন, তার রাজনৈতিক ইচ্ছে নেই। আপনারা দায়িত্ব দিয়েছেন সেটি পালন করছি।’

এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এদেশের মানুষ আপনাকে সম্মান দিয়েছেন, দিতে চান। আপনার জায়গা যেন নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।’

সরকারের সংস্কার কর্মসূচির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এটা খুব অল্প সময়, এখনো তিন মাস যায়নি। ১৫-১৬ বছরের জঞ্জাল, এই সময়ের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। অর্থনীতিকে মুচড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, এখনো পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে চরিত্র তৈরি করেছে, এর বাইরে গিয়ে কেউ কাজ করে না। খুঁজে পাওয়া যায় না ঘুষ খায় না, স্বজনপ্রীতি করে না এমন লোক। শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রশাসনসহ সব জায়গায় দুর্নীতি।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংগ্রাম চলতে থাকে। সংস্কার কার্যক্রম তেমনি চলমান থাকে। আমরা প্রত্যাশা করবো, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সব সংস্কার কিন্তু জনগণের দ্বারা স্বীকৃতহতে হবে এবং জনগণ সেটা মেনে নিতে হবে। জনগণের মতামত ছাড়া কোনো সংস্কার দীর্ঘায়িত হবে না। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু সফল হয় না। সুতরাং, এমন কিছু করা যাবে না, যেটা আমাদের দেশের সঙ্গে মানুষের কালচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা জটিল সময় পার করছি। এ ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক কিছু সামনে আসবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে আমাদের, চক্রান্ত কিন্তু শেষ হয়নি। মূল লোকেরা চলে গেলেও কিন্তু ফ্যাসিস্ট রয়ে গেছে এবং এখনো তারা কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সচেতন, পরিবর্তন সংস্কার যুগপৎ যদি না হয়, তাহলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এই জিনিসগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। আমি মনে করি, আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছি। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো হঠকারিতার উদ্যোগে যদি কোনো বড় ভুল হয়ে যায়, তাহলে আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বড় বিপদে পড়ে যাব।’

এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির জাগপার চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।