গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা বিটের অধীন বোর্ড মিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ বনভূমি দখলমুক্ত করা হয়। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আহমেদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বন বিভাগের সহায়তায় সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান,উপজেলার মুন্সীরটেক এলাকায় সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল আলম ও শামসুল আরেফিন, কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম, শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান এবং রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানা।
অভিযানে ছয় একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সেখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ঘর, দোকানপাটসহ ২ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে থাকা বন বিভাগের এই সম্পত্তি ফেরত আনতে বিভিন্ন সময়ে দখলদারদের মৌখিক ও লিখিত নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তবে দখলকারীরা কোনোভাবেই জমি ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সহায়তায় বন বিভাগ অভিযানের মাধ্যমে বনভূমি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় বন বিভাগ।
কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম জানান, উদ্ধার হওয়া জমির আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা। সম্প্রতি সময়ে জমিটি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছিল। আমরা বহুবার দখলদারদের নোটিশ প্রদান করেছি, কিন্তু তারা দখল ছাড়েনি।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আহমেদ বলেন, বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই সব জমিতে গাছ নিধনসহ নানা ধরনের অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। বন বিভাগ তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে, কিন্তু দখলদারদের প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে এই অভিযান পরিচালনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অভিযান আমরা আরো চালিয়ে যাব। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা করা হবে।
স্থানীয়রা এই অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বনভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও গাছ কাটা হচ্ছিল, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিলো। বন বিভাগের এই উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায় এবং আশা প্রকাশ করেন সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোকে এভাবেই রক্ষা করা হবে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ অভিযানের ফলে দখলমুক্ত হওয়া জমিগুলোতে বনায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। এতে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি ঘটবে এবং জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে। তারা জানান, উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সময় কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। দখলকারীরা প্রথমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তারা পিছু হটে।
অভিযানের পর দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেকোনো ধরনের পুনরায় দখলের চেষ্টা প্রতিহত করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালানো হবে।