ঢাকা-গাজীপুর ট্রেনের বন্ধ রাখা মাসিক টিকেট, টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালু, জয়দেবপুর স্টেশনে সকল ট্রেনের স্টপেজসহ গাজীপুর-ঢাকা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের ১০ দফা দাবি জানিয়েছে গাজীপুর ঐতিহ্য ও উন্নয়ন নামে একটি সংগঠন। দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী ২১ অক্টোবর জয়দেবপুর স্টেশনে সকাল থেকে ছাত্র-জনতা ও যাত্রীদের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের আল্টিমেটাম ঘোষণা দেওয়া হয় এসময়।
শনিবার (১৯ অক্টোবর ২০২৪) গাজীপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী মো. শামসুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, জয়দেবপুর-কমলাপুর ও মধ্যবর্তী স্টেশনগুলিতে কমবেশি ১ লক্ষ কর্মজীবীর প্রাত্যহিক যাতায়াত এবং শিল্প-অধ্যুষিত ৭০ লক্ষ জনসংখ্যার গাজীপুর মহানগরের প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ২০/২৫ হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। সড়ক পথের ভোগান্তির কারণে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে ট্রেনের যাত্রীচাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে সময়-সাশ্রয়ী, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সম্ভাবনাময় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় যাত্রীরা প্রতিনিয়ত অসহনীয় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে।
পূর্ববর্তী সময়গুলিতে শত চেষ্টার পরও কোন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে যাত্রীদের বিড়ম্বনা দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় গত ৩ সেপ্টেম্বর রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক সমস্যা নিয়ে ছাত্র ও যাত্রীদের প্রতিনিধি দলের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমস্যাগুলো দ্রুততম যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ সেপ্টেম্বর ডিআরএম ও অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় অক্টোবর থেকে মাসিক টিকেট ও তুরাগ ট্রেনে আরো দু’টি কোচ সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয় এবং পর্যায়ক্রমে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে বলে আশস্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়ায় ছাত্র ও যাত্রী সাধারণ হতাশ এবং বিক্ষুব্ধ। ছাত্র-জনতা ও যাত্রীদের পক্ষ থেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের প্রতিটি স্তরে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান না পাওয়ায় এবং রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ন্যূনতম কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় দাবীসমূহ আদায়ের লক্ষ্যে গাজীপুরের সাধারণ ছাত্র-জনতা ও যাত্রীদের পক্ষ থেকে আগামী ২১ অক্টোবর জয়দেবপুর স্টেশনে সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।
সংগঠনের ১০ দফা দাবি গুলো মধ্যে রয়েছে, গাজীপুর-ঢাকা বন্ধ রাখা মাসিক টিকেট ৪৫০টাকা পুনরায় চালু করা। তুরাগ ট্রেনে ৪টি মহিলা কোচসহ ১৬টি কোচ সংযুক্ত করে গাজীপুর-ঢাকা একাধিকবার চালানো। টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্র্রেন পুনরায় চালু করা এবং টঙ্গী ও তেজগাঁও স্টেশনে স্টপেজ দিয়ে একাধিকবার চলাচল করা। যাত্রী সংখ্যা ও রাজস্ব আয় বিবেচনা করে গাজীপুরে সকল ট্রেনের যাত্রা বিরতি নিশ্চিত করা এবং আসন সংখ্যা ২’শ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার করা। ভাড়ায় চালিত সকল ট্রেনের ইজারা বাতিল করে রেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালনা করা। গাজীপুর থেকে আসন বিহীন টিকিটের মূল্য এয়ারপোর্ট ও কমলাপুর যথাক্রমে ২০ ও ৩০ টাকা নির্ধারণ করা, টিকিট প্রাপ্তি সহজ করা ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ করা। যাত্রী চাহিদা থাকা সত্বেও ঈশা খাঁ, ভাওয়াল ও নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলিকে ২/৩টি কোচ দিয়ে চালানো হচ্ছে। সকল ট্রেনে কমপক্ষে ১২টি বগি সংযুক্ত করা। ট্রেন ও প্লাটফরম হকার ও ভিক্ষুক মুক্ত রাখা। ঢাকা- গাজীপুর রেল-প্রকল্প দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা এবং জয়দেবপুর জংশন স্টেশনকে মানসম্মত ব্যবহার উপযোগী করা। জয়দেবপুর স্টেশন সংলগ্ন পশ্চিম দিকে বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও বিআরটি টার্মিনালের সাথে সংযোগ স্থাপন করা।
সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়াা, সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জয়দেবপুর জংশনের সাবেক স্টেশন মাষ্টার মো. শাহজাহান, মো. মোশারফ হোসেন, মো. হাফিজুর রহমান, মো. কামাল পাটোয়ারী, গাজীপুর মহানগর ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা ফরহাদ হোসেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী সামিউল আলম নাবিল, ফারুক ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।