সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে ২০১৩ সালে বালুর ট্রাক রাখার মামলায় গুলশান থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আজ শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রায়হানুল ইসলাম সৈকত পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেরিমান্ডের আদেশ দেন।

ট্রাক রাখা ও অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও নাগরিক অধিকার হরণের দায়ে শেখ হাসিনাসহ ১১৩ জনকে আসামি করে গত ৪ অক্টোবর গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লতিফ হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য শরিফুল ইসলাম শাওন।

মামলার এজাহারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে এক নম্বর এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া, এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামির মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অবৈধ নির্বাচন কমিশন দ্বারা সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপি আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের রূপরেখা হিসেবে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামক কর্মসূচি দেয় বিএনপি। যেখানে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে বালুভর্তি পাঁচ-ছয়টি ট্রাক বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার গেটের সামনেসহ আশপাশে অবৈধভাবে এলোমেলো করে রেখে উল্লিখিত আসামিরা রাস্তার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং ওই বাসভবনের গেট বন্ধ করে দেয়। বেগম খালেদা জিয়া যেন সমাবেশে যোগ দিতে না পারে সে জন্য রাস্তার ওপরে ত্রাস সৃষ্টি করে গণতন্ত্র অধিকারকে হরণ করে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এতে উল্লেখ করা হয়, মামলার আসামিরা গোপন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর যেকোনোভাবে খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের হয়ে সমাবেশে অংশ নিতে দেওয়া যাবে না। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামিরা মারণাস্ত্র, লাঠি, বন্দুক, টিয়ারশেলসহ যুদ্ধক্ষেত্রের মতো সজ্জিত হয়ে গুলশান-১ ও ২, বনানী, বারিধারা ডিওএইচএস ও মার্কিন দূতাবাসসহ আশপাশের এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবিসহ ২৮ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান নেয়। সঙ্গে অস্ত্রের মহড়া দেয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। সে সময় আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর ও গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ ডাক দেওয়ার পর খালেদা জিয়ার বাসার সামনে বালুর ট্রাক এনে রাখা হয়েছিল। এভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রেখে ২০১৪ সালে একটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই ঘটনার পরই কার্যত দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলে তারা। ওই সময় পিপার স্প্রে প্রয়োগ করে খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন বাদী।