ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মাফিয়া ও দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে প্রত্যাশিত গণতন্ত্রে উত্তরণ হোঁচট খেতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন বলেন, ফ্যাসিষ্ট আর্দশ লালনকারী ও মাফিয়া সরকারের দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে রেখে কোনো উদোগেরই সুফল মিলবে না। যে কোনো উপায়ে ঘরে-বাইরে জনগণের প্রতিদিনের দুর্ভোগ যদি সরকার কমাতে না পারে, তাহলে পলাতক সরকারের সহযোগীরা সুযোগ গ্রহণ করবে।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) রজত জয়ন্তী উপলক্ষ্যে এক আলোচনায় সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন।

এ সময় জেডআরএফ’র ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. জুবাইদা রহমানও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘গণহত্যা চালিয়ে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর জনগণ তাদের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মাফিয়া চক্রের দীর্ঘ ১৫ বছর শাসনকালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। জনগণ এখন পলাতক স্বৈরাচারের দুঃশাসনের অভিশাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি চায়। বঞ্চিতরা তাদের হারানো অধিকার ফিরে পেতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘মাফিয়া চক্রের কবল থেকে দেশে ও জনগণকে মুক্ত করতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছেন। স্বৈরাচারের বুলেট বিদ্ধ হয়ে হাজারো মানুষ এখনো হাসপাতালের বিছানায়, রাজপথে শহিদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অথচ পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদের মধ্যে নূন্যতমও অনুতাপ নেই। বরঞ্চ মাফিয়া প্রধানের রেখে যাওয়া সুবিধাভোগীরা ইতোমধ্যেই ঘর-বাইরে, সরকারে-প্রশাসনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের ডাল-পালা বিস্তার করতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের বিষদাত শুরুতে উপড়ে ফেলতে না পারলে তাদের বিষাক্ত দংশনে ছাত্রজনতার শত শহিদের রক্তে অর্জিত গণতন্ত্র আবারো বিপন্ন হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করে রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে একটি সরকারের জন্য আড়াই মাস হয়তো যথেষ্ট সময় নয়, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় নির্ধারণ এবং অগ্রাধিকার ইস্যু ঠিক করার জন্য এই আড়াই মাস কম সময়ও নয়। অন্তর্বর্তী সরকার এজেন্ডা নির্ধারণে ব্যর্থ হলে সেটি প্রত্যাশিত গণতন্ত্র উত্তরণের পথে অনাকাঙ্খিত বাধার কারণ হয়ে উঠতে পারে। গণঅভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারে বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। এমন একটি কাঙ্খিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সর্ম্পকে সরকারের বক্তব্যেও গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ উদ্রেক করে। জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও দায়িত্বশীল এবং গণমুখি কার্যকর দেখতে চায়। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, জনগণের সরাসরি ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সে লক্ষেই গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের নিঃশর্ত সমর্থনের প্রতি সম্মান দেওয়া সরকারের প্রধান দায়িত্ব।’

তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র ও রাজনীতি সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন বিষয় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আমি বরাবরই সংস্কারের পক্ষে। তবে এটি একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। কখনো এটি সময় সাপেক্ষ। তবে যে কোনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারিত্ব সৃষ্টি না হলে, সেই সংস্কার শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত হল দেয় না, পাওয়া যায় না।’

জনগণ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পলাতক মাফিয়া সরকারের দুঃশাসনকালে স্বৈরাচারের অনেক সমর্থক নেতাকর্মী সারাদেশে অবৈধভাবে বিভিন্ন মতের অনেক মানুষের জায়গা, জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিলো। বর্তমান পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে জবরদখলকারীদের কাছ থেকে অনেকে তাদের বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা জমি, সম্পদ পূণরুদ্ধারের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। বেদখল হওয়া জমি, সম্পদ উদ্বারের জন্য সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে দেশে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিক্রতা এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যে সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার অনেক বাইরে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও, জনগণের আয় সেভাবে বাড়েনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, জিনিপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও বাস্তব এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন। বছরের পর বছর ধরে মাফিয়া চক্রের তৈরি বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি হয়তো একটু কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার হয়তো বাড়ানো যেতে পারে।

এ সময় জেডআরএফ’র কার্যক্রম প্রসঙ্গে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ডা. জুবাইদা রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। জেডআরএফ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে আপনারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছেন, এটি প্রশংসনীয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। জেডআরএফ’র কার্যক্রমকে আমি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সারাদেশে জেডআরএফ’র স্বেচ্ছাসেবীরা অভাবনীয় কাজ করেছে।