ছাত্র-জনতা বিপ্লবে শুধু সরকার পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছুই বদলায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রচার দলের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে, দুর্যোগ প্রশমন বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,‘বিগত এক-এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগের সকল মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেনো আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই বলেছেন, ‘‘আমাদের ওপরে মিথ্যা মামলা হয়েছে।” প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল- এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপরে এতো অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেনো আপনাদের বিবেচনায় আসছে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথিত হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি। তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এই কারণেই আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।’

বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের অধিকারের জন্যে দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা সন্তান হারা হয়েছে, যারা পিতৃহারা হয়েছে, যারা মা হারা হয়েছে এরা সব হারিয়েছে। মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই। সব আগের মতোই আছে।’

নির্বাচন হবে কি না কিভাবে বিশ্বাস করব উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘এখনো নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন নাই। কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনো উইথআউট নির্বাচন কমিশন। সেখানে আমি কিভাবে বিশ্বাস করব আপনি নির্বাচন করবেন, কিভাবে বিশ্বাস করব? কমিশনের পর কমিশন। আরেকটা কমিশন হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা জাস্ট ইজ এ টাইম কিলিং, নাথিং মোর। নির্বাচন যত শিগগিরই হবে জনগণের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের রায়ে মধ্যে হবে। এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে জনগণ ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। কিন্তু মরা মানুষ উপস্থিত হবে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে ১৬ বছর পর জনগণের একটা দাবি। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। একই সময়ে সেই নির্বাচনের জন্য যে এতো রক্ত দিল। সব কিছু করল আজকে আপনাদেরকে সেই যে জনগণের ভোটাধিকার, স্বাধীন ভোট যাকে খুশি তাকে দিবো অন্য কোনো দাবি নাই। জাস্ট আপনি একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবেন সুন্দর করে।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘আজকে কোটা বৈষম্যবিরোধী থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাবার যে আন্দোলনটা সেই আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো সাংঘর্ষিক না। একই ধারার আন্দোলন। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদেরকে (ছাত্রদের) আলাদা করতে চান কেনো?

ছাত্ররা সচিবালয় ঘেরাও করবে কেনো। কিছু থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সর্তক করবে। আন্দোলন শেষ আমরা তো চলে গেছি। আমাদেরকে কেউ ডাকে নাই। ১৯৬২ সালে আমি ক্লাস এইটের ছাত্র তখন থেকে শিক্ষা আন্দোলনে ছিলাম, তখন থেকে সেই রাজনীতি করছি। আমি বলব, তাই ছাত্রদের আলাদা করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। বৈষম্যবিরোধী যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয় তার মাসুল কে দেবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু রিফর্ম দরকার হয় সেইটুকু রিফর্মের জন্য বিবেচনা করবেন। আর আপনাদের ভাবনাগুলো আর আমাদের ভাবনাগুলো….। আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি, এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে জনগণের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবে, তারা ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করবে।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা বলছি, আপনারা যদি ব্যর্থ হন জাতি ব্যর্থ হবে, আপনারা ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল ব্যর্থ হওয়া। আমরা দেখতে চাই আপনারা সফল হন। আমরা আপনাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেব।মানুষের তবে স্পষ্ট করেন আপনারা নির্বাচন করবেন।’

সবায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রচার দলের সহসভাপতি রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের ওপরে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হকসহ আরও অনেকে।