লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি করে চার শিক্ষার্থীসহ ১২ জনকে খুনের ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। তবে হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুরের একেএম সালাহ উদ্দিনসহ অস্ত্রধারী আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সালাহ উদ্দিন টিপু সদর পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি।

বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন স্বজনরা। তবে কিভাবে তিনি বিদেশে পাড়ি দিলেন, সেই বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা জানান তারা।

গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারানো দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেনের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে ১৪ আগস্ট সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে এখনো মামলার আসামিরা ধরা পড়েননি।

রোববার সকালে এই প্রতিবেদককে আমির হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে সালাহ উদ্দিন সরাসরি জড়িত। তার নৃশংসতার কাহিনী এরশাদ শিকদারকেও হার মানায়। আমাদের দাবি এখন একটাই- সালাহ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হোক।

সাব্বির ছাড়া নিহত অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন- লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদ আল আফনান, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাউছার হোসেন ও একই কলেজের মো. ওসমান গণি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৮ জন মারা যান এবং আহত হয়েছেন শতাধিক।

৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে বাসভবনের ছাদের ওপর থেকে টানা চার ঘণ্টা গুলি চালিয়ে শতাধিক ছাত্র-জনতাকে আহত করেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, তার গাড়িচালক মো. রাসেল ও অন্য সহযোগীরা। এর আগে ২ আগস্ট অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন মো. রাসেল। শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান ও সাব্বির হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।

লক্ষ্মীপুর জেলা মানবাধিকার উন্নয়ন ফোরামের আহবায়ক নুর মোহাম্মদ জানান, সালাহ উদ্দিন টিপুর পেছনে প্রভাবশালী কেউ তো আছেন। এ কারণেই তিনি আলোচিত চার শিক্ষার্থী খুনের আসামি হয়েও দুই মাসে ধরা পড়েননি। তার গাড়িচালক মো. রাসেল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেছেন। তাকেও গ্রেফতার করতে পারেনি জেলা পুলিশ। তবে প্রভাবশালীদেরও বার্তা দিতে হবে, অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. আবদুল মুন্নাফ এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে আন্তরিকতার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশ খোঁজ না পেলেও সালাহ উদ্দিন নিজের ফেসবুকে সৌদি আরবে অবস্থানের ছবি দিয়েছেন। এই প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে শনিবার সকালে ও রোববার দুপুরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরে বলেন, আমি সৌদি আরবে আছি।

কীভাবে সৌদি আরব গেলেন- এমন প্রশ্ন করা হলে সালাহ উদ্দিন বলেন, অনেক কথা হয়েছে এবার রাখি। এই বলে দ্রুত লাইন কেটে দেন।