প্রথমে ৪৩ দিন এবং দ্বিতীয়বার ১ বছর ৬ মাস ১৪ দিন গুম করে রাখার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
ট্রাইব্যুনালের অভিযোগ দায়ের করার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আয়নাঘর ছিল শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর হাতিয়ার। শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি গুম হয়েছি।
আয়নাঘরে নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ওখানে অনেকে মারা গেছে ভাই। মারা যাওয়ার কথা। ওখানে গরমে, ভয়ে, আতঙ্কে মারা যাবেন। প্রতিদিন ওখানে চিৎকার হচ্ছে। কান্নাকাটি হচ্ছে।
আয়নাঘরে কত দিন ছিলেন সে বিষয়ে হাসিনুর রহমান বলেন, এই আয়নাঘরে প্রথমে চাকরি থাকা অবস্থায় ৪৩ দিন তাকে রাখা হয়। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট দ্বিতীয়বার আমাকে গুম করে ১ বছর ৬ মাস ১৪ দিন রাখা হয়। এ সময় তার ওপর অমানসিক নির্যাতন করা হয়। আমার পুরো পরিবার ছিল আতঙ্কিত।
হাসিনুর রহমান বলেন, আমি প্রথমে গুম কমিশনে আবেদন করেছি। তারপর আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলাম।
তিনি বলেন, আজকে আমি মামলা করার অধিকার পেলাম এটা আবু সাঈদের রক্তের বিনিময়ে। এজন্য আমি আবু সাঈদ ও আট শ’ শহীদকে স্যালুট করি। তাদের রক্তের বিনিময়ে আজকে আমি অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ পেয়েছি। আমি ১ বছর ৬ মাস ১৪ দিন গুম ছিলাম। অমানুসিক নির্যাতনে ছিলাম। আজকে আইনি প্রক্রিয়ায় যারা গুমের শিকার তারা ন্যায়বিচার পাবে বলে আসা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমি গুম হয়েছি, তার আগে চাকরিতে থাকা অবস্থায় গুম হয়েছি, সব কিছু শেখ হাসিনার আদেশে। তার চক্র তারেক সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য যারা আছেন তদন্তে বের হবে।
কারা তাকে গুম করেছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ডিজিএফআই কর্তৃপক্ষের কিছু অফিসার, এদের বিচার হওয়া উচিত। এই ঘটনায় চাক্ষুষ সাক্ষী আছে।
তিনি বলেন, ওই আয়নাঘরে আমি ব্রিগ্রেডিয়ার আজমিকে দেখেছি। কোন রুমে, কোথায় আমি সম্পূর্ণ পরিষ্কার চিহ্নিত করে দিতে পারব। এখান থেকে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৮ সালে মার্চ মাসে প্রশাসন থেকে মঈন ইউ আহমেদের সরকার আমাকে প্রতিবেশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কাজ করার জন্য। আমি অনিহা প্রকাশ করি।
তিনি বলেন, ভারতকে আমি শক্র মনে করি এটা আমার দেশপ্রেম। অরেকজন রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করীম চৌধুরী। তার অনৈতিক প্রস্তাবে আমি রাজি হয়নি। এটা মূল কারণ। যার জন্য মেজর জেনারেল জিয়া আমার পেছনে লাগে। মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ -এর সাথে কাজ না করা। বিডিআর ম্যাসাকার এবং বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে বের করে দেয়া হয়েছে, এটা আমি মেনে নিতে পারিনি।
যারা গুম ঘরে ছিল এখনো মুক্তি পায়নি এমন কেউকি এখনো আছে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আছে। ওখানে অনেকে মারা গেছে ভাই। মারা যাওয়ার কথা। ওখানে গরমে, ভয়ে, আতঙ্কে মারা যাবেন। প্রতিদিন ওখানে চিৎকার হচ্ছে। কান্নাকাটি হচ্ছে। সেখানে ঘুমাইতে পারবেন না তো। গুম হওয়া পরিবারও ভয়ে আতঙ্কে থাকে, তারা ভয়ে বলেন না। যা গেছে গেছে, আমরা বেঁচে থাকি। আল্লাহ ফয়সালা করবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গুম হওয়া ১২ জনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আবেদন দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকজন ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে গুম করে নির্যাতন করার অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপরদিকে ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এ নিয়ে মোট ৫২টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হলো। প্রসিকিউশন অফিসে এখন পর্যন্ত ৩৯টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর আগে তদন্ত সংস্থায় ১৬টিসহ মোট ৫৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।