অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তর করার মান্ডেট দিয়েছে জনগণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

তিনি বলেছেন, ‘তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) একমাত্র সহজ মান্ডেট হচ্ছে বাংলাদেশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এখন সরকার যদি মনে করে তাদের সব কিছু সংস্কার করার মান্ডেট দিয়েছে, আগামী ১০০ বছর তারা ক্ষমতায় থাকবে- এই মান্ডেট ছাত্র-জনতা তাদেরকে দেয়নি। এটা ছাত্ররাও ভাবলে তারা ভুল ভাবছে।’

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে দ্যা মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস শীর্ষক গোলটেবিল’ আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভার মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারন অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।

মঈন খান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার কথাই বাইবেল নয়, বাংলাদেশের মানুষ পলিটিক্যাল সাইন্স ভালো জানে। এবং এদেশে স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা নিতে হয় তাও জানে। আসুন আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে যাই, মানুষের সত্যিকার অধিকার তাদের কাছে ফিরিয়ে দেই। স্বাধীনতা ৫৩ বছরে মধ্যে ১৯৯১ সালে নির্বাচন ছিল সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেখান থেকেও সরকার শিক্ষা নিতে পারে।’

বিগত দু’মাস অন্তর্বর্তী সরকার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ১৫ আগস্ট ঘিরে যে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু সেই ধোয়াশা রাজনৈতিক আকাশে বিলীন হয়ে গেছে। তারা সফল হয়েছে। এরপর পরিকল্পিতভাবে জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার, সংখ্যালঘু ইস্যু, ভারতসৃষ্ট বন্যা, গার্মেন্টস শিল্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিরতা তৈরি, দ্রব্যমূল্য বাড়ানো, সীমান্তের ওপর থেকে অডিও ফাঁস এবং সবশেষ দূর্গাপুজা নিয়ে দেশে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জনগণ এবারো প্রতিহত করবে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রশ্ন- এই সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কিনা? তারা যত দ্রুত কাজ দরকার ছিল তারা করতে পারছেন কিনা? বিপ্লবী সরকার স্বল্প সময়ের মতো নতুন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবে? সংস্কার ও নির্বাচন সমান্তরালভাবে চলবে- আজকে সরকারও এটা স্বীকার করেছে। জনগণের মতামত দেয়ার যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তা কিছুটা হলেও কাজ করছে। এটা একটি শুভলক্ষণ।’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমেরিকা ও ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন বলেছিল যে বাংলাদেশ হচ্ছে উদার মুসলিম দেশ। মুলত গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না, বরং ধর্মহীন ছিল। এদেশের মুসলমান কখনো মৌলবাদ ছিল না, এখনো নেই। মুসলমানদের বার বার ভুল বুঝিয়ে মৌলবাদী প্রমাণ করে পশ্চিমাদের সহায়তা নেয়ার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ। দূর্গাপুজা সামনে রেখে আবারো বিশ্বে একই প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’ এর পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশে আশ্রয় পাচ্ছে না। এমনকি ইংল্যান্ডেও না। এর কারণ একটাই, আন্তর্জাতিক বিশ্ব জানে যে তিনি কত বড় ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট। গণহত্যায় জড়িতদের বিচার অবশ্যই করতে হবে। তবে এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা অনেকটাই ঢিলেঢালা।’

সরকারের অবস্থান যদি এমন ঢিলেঢালা থাকে, তবে স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।