বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচার গুলিবর্ষণে পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে ইমাম হাসান তাইমকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিহত তাইম রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপপরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে। সে নারায়নগঞ্জ সরকারী আদমজী নগর এম. ডব্লিউ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আজ সোমবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর ররহমান শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। শুনানিকালে আবুল হাসানকে এজলাসে তোলা হয়।

গত ২০ আগস্ট নিহতের মা মোসা. পারভীন আক্তার ওয়ারী বিভাগের তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনস, ওয়ারী বিভাগের এডিসি শাকিল মোহাম্মদ শামীম, এসি তানজিল আহমেদ, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন ও এসআই শাহাদাৎ আলীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকার গত ২০ জুলাই কারফিউ জারি করে। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময় তাইম তার দুই বন্ধুর সঙ্গে যাত্রাবাড়ির কাজলা এলাকায় চা খেতে যায়। ওই সময় বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন ইকবাল হোসেন, শামীম ও তানজিল আহমেদের নির্দেশে জাকির হোসেন ও তার সঙ্গীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়। প্রাণ ভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এলোপাথারী ছুটাছুটি করতে থাকে। তাইম ও তার দুই বন্ধু লিটন চা স্টোরের ভেতর ঢুকে দোকানের সাটার টেনে দেয়। কিন্তু সাটারের নিচের দিকে একটু খোলা ছিলো। সেখানে অবস্থারকারীদের পুলিশ টেনে বের করে। পরে জাকির হোসেন গুলি থেকে বাঁচতে দৌড় দিতে বলে। তখন তাইম সবার আগে দৌড় দেয়। তখন জাকির গুলি করেন। পরে সেখানেই মারা যায় তাইম।

এর আগে সাকিব হাসান নামের এক তরুণকে হত্যার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় করা মামলায় আবুল হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাকে এই মামলায় ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। অন্যদিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিনের আবেদন জানানো হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আবুল হাসানকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

এ মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, সাকিব হাসান নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৪২ জনের বিরুদ্ধে গত ৪ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।

মামলায় বলা হয়, গত ১৮ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও পুলিশের সদস্যরা হামলা করেন। হামলায় সাকিবসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। পরে সাকিব মারা যান।

পুলিশ সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলি করে মানুষ হত্যার অভিযোগে আবুল হাসানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার নয়াপাড়ার রোহিঙ্গাশিবির থেকে আবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।