বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উদ্দেশে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানে বলেছেন, ‘কোর্ট রাগ দেখানোর জায়গা নয়, যতক্ষণ গাউন পরে থাকবেন।’ আজ রবিবার যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবিরের রিমান্ড শুনানিতে হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থী কয়েকজন আইনজীবী। পরে বিচারক তাদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপপরিদর্শক তন্ময় কুমার বিশ্বাস আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে সহযোগিতা করে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, ‘এই আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব। অন্যায়-অপকর্মে সাহায্য করায় তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়। জোর করে সিল মেরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৪ বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থান করে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। বিরোধীদের হত্যা ও গুমে তার ভূমিকা ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ব্যবহার করে বিরোধীদের হয়রানি করতে ইন্ধন জুগিয়েছেন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা চালাতে তার ভূমিকা ছিল। সেখানে যুবদল নেতা শামীম মারা যান।’

অন্যদিকে আসামিপক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করে বলেন, ‘তিনি একজন সফল সচিব।’ এ সময় আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তখন আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, ‘সফল সচিব উপস্থাপন করবেন।’ তখন বিচারক বলেন, ‘ভুলে যাবেন না আইনজীবীদের আচরণ আইনজীবীদের মতো হতে হবে। উনি একজন সিনিয়র আইনজীবী।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি এসডিজির সচিব। এসডিজির সচিব আর মুখ্য সচিব কিন্তু এক না। সম্পূর্ণ সেফারেট। বাংলাদেশ, জাপানের বন্ধুত্ব পুন:প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন।’ এ সময় বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, ‘মামলার মেরিট নিয়ে বলেন।’ এ সময় বিচারক বলেন, ‘আপনারা শোনেন ফ্যাসিবাদ, ইন টলারেন্স টু আদারস। এ রকম হট্টগোল আগে দেখিনি। বড় বড় মামলা করেছি। উনাদের (আসামিপক্ষ) সুযোগ দিতে হবে।’

পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘এজাহারের ৭০৪ জন আসামির মধ্যে তার নাম নেই। বাদী ভুলেও উচ্চারণ করেননি। একজন সচিব হিসেবে জাপানের মত দেশে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হয়েছে। ২০১৮-তে রিটায়ার্ড করেন। মামলার বিষয়ে জানেন না। এমপি হিসেবে এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। এতো কাজ করেছেন যে উনার কাছে কিছু চাইতে হয়নি। এলাকাকে আলোকিত করেছে। তাই ভোট চাইতে হয়নি।’ তখন বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, ‘ভোট চোর, খুনি। হাসিনার প্রেতাত্মা।’ তখন বিচারক বলেন, ‘বায়োডাটা না দিয়ে ফ্যাক্ট বলেন।’

এরপর আসামির আইনজীবী বলেন, ‘২০১৮ সালে অবসরে গেছেন। সম্প্রতি একটা ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত না। রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের প্রার্থনা করছি।’ অপর আসামি হুমায়ন কবিরের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।

আসামি পক্ষে শুনানিকালে বিভিন্ন সময় বিএনপির আইনজীবীরা হট্টগোল, চিৎকার করেন। তাই বিচারক বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আদালতে হট্টগোল করলে নিউজ হয়। আমি সবার বক্তব্য শুনতে এখানে বসেছি। আপনারা হট্টগোল করেন। বিষয়টা এমন যেনো কোর্টকে প্রেশার দিচ্ছেন। প্রেশার নেওয়া মানুষ আমি না। এ জন্য এতোদিন এখানে (ঢাকায়) আসিনি। আগে তো আপনারা এখানে অনেককে (বিচারক) দেখেছেন।’

বিচারক বলেন, ‘আর আপনারা যে হট্টগোল করছেন আপনাদের তো নাম আসছে না। কারণ আদালতের ভেতরে কোনো টেলিভিশন নেই। বাইরে গিয়ে যতো বক্তব্য দেওয়ার দিবেন। এমন করলে মানুষ বলবে এটা ক্যাঙ্গারু কোর্ট। কোর্ট রাগ দেখানোর জায়গা না। যতক্ষণ গাউন পড়ে থাকবেন।’

এরপর বিচারক আসামি আবুল কালাম আজাদ ও হুমায়ন কবিরের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। শুনানিকালে এজলাসে থাকাকালে আসামি আবুল কালাম আজাদকে অশ্রুসিক্ত দেখা যায়।