দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্ত হন তিনি।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার আমিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত রবিবার মাহমুদুর রহমানকে এ কারাগারে আনা হয়। আজ দুপুরের দিকে তার (মাহমুদুর রহমান) জামিনের আদেশের কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে তা যাচাই-বাছাই শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়া মাহমুদুর রহমান আজ জামিন পেয়েছেন। আজ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন শুনানি শেষে জামিনের এই আদেশ দেন।
মামলাটিতে সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি বিচারিক আদালত ঢাকার দ্বিতীয় অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বর্তমান বিচারক মাহবুবুল হক জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছর ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর। সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
দণ্ডবিধির দুইটি ধারায় একটিতে পাঁচ বছর এবং অপরটিতে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় আসামিদের। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে প্রত্যেককে আরও তিন মাসের কারা ভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। রায় ঘোষণার সময় সবাই পলাতক ছিলেন।
রায়ে আরও বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত সবাই পলাতক থাকায় তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর রায় কার্যকর হবে।
মামলার অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। তাকে হত্যার চেষ্টার ষড়যন্ত্রের ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয় তার জবানবন্দিতে বলেন, সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন এবং বিএনপির নেতৃস্থানীয় কয়েকজন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তিনি বিষয়টি ‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস’ থেকে জানতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর একজন সদস্যকে শফিক রহমান, মাহমুদুর রহমান, মামুন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এবং বিএনপির আর এক নেতা মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ ওরফে সিজারের মাধ্যমে ঘুষ দেন।
তিনি দাবি করেন, এফবিআইর ওই সদস্যকে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন সিজার। সজীব ওয়াজেদ জয়ের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার এবং প্রতিটি মুহূর্তের খবরা খবর দেওয়ার জন্য এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়া হয়। জয় যতদিন থাকবেন ততদিন প্রতিমাসে আরও ৩০ হাজার ডলার করে ঘুষ দেওয়ার চুক্তিও হয়েছিল ওই এফবিআই সদস্যের সঙ্গে।
জয় বলেন, এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা হয়। ওই মামলায় জাসাস সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও এফবিআই এক সদস্যকে সাজা দেওয়া হয়।